দুই মাসেও খোঁজ মেলেনি চতুর্থ শ্রেণির ফয়সালের
ভোলার লালমোহন উপজেলায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ফয়সাল। থানায় জিডি করেও কোনো হদিস পাচ্ছে না পরিবার। সন্তানকে হারিয়ে মা জোছনা বিবি এখন পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। শিশু ফয়সাল অপহরণ নাকি নিখোঁজ এ নিয়ে এখন দেখা দিয়েছে ধুম্রজাল।
লালমোহন উপজেলার ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাতানি এলাকার নানা বাড়ি থেকে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল শিশু ফয়সাল নিখোঁজ হয় বলে থানায় জিডি করেন মা জোছনা বিবি। জিডির পর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় বাড়ির পাশের ইয়াছিন মিস্ত্রির ছেলে রুবেল নামে এক যুবকসহ ৩ জনকে সন্দেহ করে আদালতে অপহরণ মামলা করেন জোছনা বিবি।
মামলার পর রুবেল আত্মগোপনে চলে যায়। ওই মামলায় রুবেলের বাবা ইয়াছিন মিস্ত্রিকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। এরপর ফয়সালকে খুঁজে দেওয়ার কথা বলে ফরাজগঞ্জ ইউপির ৩ ইউপি সদস্য আটককৃত ইয়াছিন মিস্ত্রিকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেন।
শিশু ফয়সালের মা জোছনা বিবি জানান, তার স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর ফয়সালকে নানা-নানির কাছে রাখতেন। স্থানীয় পেশকারহাট বাজারের একটি কিন্ডারগার্টেনে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো শিশু ফয়সাল। নিজে ঢাকা গার্মেন্টে চাকরি করতেন। ৩ এপ্রিল জোছনা বিবির বাবা আব্দুল খালেক তাকে ফোন করে জানায় ফয়সালকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর শুনে জোছনা পরদিন ঢাকা থেকে লালমোহন আসেন। ছেলে ফয়সাল কোথায় গেলো বা কে নিলো তার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় মায়ের পরিবার উদ্বিগ্ন। ফয়সাল তার বাবার কাছে গিয়েছে কিনা, বা অন্য কেউ তাকে তার বাবার কাছে নিয়ে গিয়েছে কিনা তারও কোনো খোঁজ পুলিশ বের করতে পারেনি।
জোসনা বিবি বলেন, ফয়সালের বাবার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ফয়সালের বাবা কোনো দিন ছেলের খোঁজ নেননি। প্রতিবেশী রুবেলই তার ছেলেকে অপহরণ করে কোথাও নিয়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, ঘটনার ৬ দিনের মাথায় ৯ এপ্রিল বিকেলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির নম্বর থেকে ফোন আসে। তাকে থানার ওসির পরিচয় দিয়ে ছেলেকে তদন্ত করে বের করে দিবে বলে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। এতে ওই ব্যক্তিকে ৩ হাজার টাকা দেন বিকাশের মাধ্যমে। থানায় গিয়ে জানতে পারেন ওই নম্বর থানার কারো নয়। পরে ওই নম্বরের বিরুদ্ধে আরেকটি জিডি করেন জোছনা বিবি। এ ঘটনার ৩দিন পর আরেকটি নম্বর থেকে শিশু ফয়সালের স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবির মাস্টারের নম্বরে ফোন আসে। তাকে দারোগা পরিচয় দিয়ে বলা হয় শিশু ফয়সাল পদ্মা সেতুর কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। তার চিকিৎসার জন্য জরুরি টাকা পাঠাতে বলা হয়। ফয়সালের মাকে এ ঘটনা জানালে তারা টাকা না পাঠিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলে ওই নম্বরটি পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর ওই নম্বরে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ফয়সালের মা জোছনা বিবি বলেন, এভাবে একের পর এক বিভিন্ন নম্বর দিয়ে প্রতারণা করে আসলেও লালমোহন থানা থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেওয়া হয়নি বলে জোছনা বিবি অভিযোগ করেন।
এদিকে রুবেলের বাড়িতে গিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে রুবেলের মা রোজিনা জানান, সে গলাচিপা ব্যবসা করে। শিশু ফয়সাল প্রসঙ্গে তিনি জানান, ফয়সালকে তার নানা মারপিট করেছে। কয়েকদফা মারের কারণে সে সহ্য করতে না পেরে অনেকের কাছে বলেছিল, চলে যাবে। এলাকার সবাই এ ঘটনা জানে। মারপিট সহ্য করতে না পেরে হয়তো সে কোথাও চলে গেছে। ফয়সালের মা ও নানার সঙ্গে আমাদের অনেকদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তার রেশ ধরে তারা হয়রানি করতে আমাদেরর বিরুদ্ধে শিশু ফয়সালকে অপহরণের মামলা করেছে।
এ বিষয়ে লালমোহন থানার ওসি এসএম মাহবুব উল আলম বলেন, শিশুটি আসলে কোথায় আছে তার তদন্ত চলছে। হতে পারে ওই শিশু তার বাবার কাছে রয়েছে।