এক বছরে স্কুল ছেড়েছে ৫১১৫৩৪ শিশু, সবচেয়ে বেশি কোভিডে
করোনার প্রকোপে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে দেশের শিক্ষাখাতে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২২ সালে ৫ লাখ ১১ হাজার ৫৩৪ জন শিশু বিভিন্ন কারণে স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে করোনা মহামারির কারণে ঝরে পড়েছে সবচেয়ে বেশি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮৫৯ শিশু। অর্থাৎ, স্কুল থেকে ঝরে পড়াদের ৩৩ শতাংশই করোনার ধকল সামলাতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ এর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে শিশুশ্রম বেড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ খাতেও বেড়েছে শিশুশ্রম।
২০২২ সাল শেষে দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫। এদের মধ্যে বর্তমানে স্কুলে যায় ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৫ হাজার ১৯৪ শিশু। এক সময়ে স্কুলে গেলেও এখন বিভিন্ন কারণে যাচ্ছে না ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৫ শিশু। বাকি ২৪ লাখ ১ হাজার ১৪৬ শিশু কখনোই স্কুলে যায়নি। অর্থাৎ, এ বয়সী শিশুদের ৮৭ দশমিক ১ শতাংশ স্কুলে যাচ্ছে, ৬ দশমিক ৯ শতাংশ এক সময় স্কুলে গেলেও এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আর ৬ শতাংশ শিশু কখনোই স্কুলে যায়নি।
যে ২৪ লাখ ১ হাজার ১৪৬ জন শিশু কখনোই স্কুলে যায়নি তাদের না যাওয়ার কারণও উঠে এসেছে জরিপে। কখনোই স্কুলে না যাওয়াদের সবচেয়ে বেশি বা ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ বলছে, স্কুলে পড়ার খরচ খুব বেশি হওয়ায় অর্থের অভাবে তারা স্কুলে যায়নি। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংশ ২১ শতাংশ জানিয়েছে, তারা পরিবারের বিভিন্ন ব্যবসা বা কৃষিকাজে সময় দেওয়ার কারণে স্কুলে যেতে পারেনি। ২০ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, পারিবারিক অন্যান্য গৃহস্থালির কাজে জড়িত থাকায় তারা স্কুলে যেতে পারেনি।
জরিপে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে ৫ লাখ ১১ হাজার ৫৩৪ জন। ঝরে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ করোনা মহামারী। ঝরে পড়াদের ৩৩ শতাংশ বা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮৫৯ শিশু শুধু এই মহামারীর কারণে স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। তবে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মেয়েশিশুদের মধ্যে। কোভিডে ঝরে পড়া শিশুদের ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছেলে আর ৪০ দশমিক ৬ শতাংশই মেয়ে।
কোভিডে স্কুল থেকে ঝরে পড়া ১ লাখ ৬৮ হাজার ৮৫৯ জন শিশুর মধ্যে ছেলে ৬৩ হাজার ৯৯৯ জন, যেখানে মেয়ে শিশু ১ লাখ ৫ হাজার ১৬০ জন।
স্কুল থেকে ঝরে পড়াদের ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী বলছে, স্কুলের পড়ার খরচ বেশি হওয়ায় তারা স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ, ৭০ হাজার ৬৩৪ শিক্ষার্থী স্কুলের ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে টাকার অভাবে পড়তে পারেনি। তারা স্কুল ছেড়ে দেওয়াকেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত মনে করেছে।
দেশে পরিচালিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০২২ শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট চতুর্থ জরিপ। এটি মূলত শ্রমজীবী শিশু, শিশুশ্রম এবং বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম সংশ্লিষ্ট তথ্যউপাত্ত সরবরাহ করে। জেনেভায় ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসটিকস বা আইসিএলএস সম্মেলনে গৃহীত শিশুশ্রম সম্পর্কিত পদ্ধতি অনুসরণ করে এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
জরিপে ১ হাজার ২৮৪টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) থেকে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা (১২টি নন-রেসপন্স খানাসহ) নির্বাচন করা হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬৪টি জেলা থেকে নমুনা পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছিল। এই জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত পরিচালিত হয়।