কর্মশালায় দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করায় চটলেন মন্ত্রী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:০০ PM , আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:০০ PM
কর্মশালায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে করণীয় বিষয়ে বক্তাদের কাছ থেকে বক্তব্য না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। একপর্যায়ে প্রধান অতিথির আসনে বসেই ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চের সামনে উপস্থিত শিক্ষা কর্মকর্তাদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কী করণীয় তা বলার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
শনিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে ‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যোগাযোগ ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ’ বিষয়ক কর্মশালায় এ ঘটনা ঘটে।
বেলা সাড়ে ১০ টার দিকে কর্মশালা শুরু হলে একে একে বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠেন দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউশনের ইন্সট্রাক্টর, সহ-সুপার এবং বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
মন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ রেখে পিটিআই ইন্সট্রাক্টর শাহ আলম সরকার বলেন, ‘আমরা একই পদে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চাকরি করছি। নতুন পদ তৈরি করে আমাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানাই।’
গাজীপুর পিটিআইয়ের সুপার খন্দকার দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর সঙ্গে পিটিআইয়ে ফ্রি ওয়াইফাই জোনের ব্যবস্থা করলে ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও সহজ হতো। শিক্ষকদের ট্রেনিং দেওয়া আরও সহজ হতো।’ এছাড়া পিটিআইয়ে নারীদের জন্য ডরমেটরির ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি।
গাজীপুর পিটিআইয়ের সহ-সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে পিটিআইয়ে প্রচুর জনবল শূন্য। এই শূন্য পদে লোকবল নিয়োগ দিয়ে ডাবল শিফট করা হলে সমাধান হবে। শিক্ষার মান আরও বেড়ে যাবে।’
মানিকগঞ্জের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষা পদকে অন্যরা থাকলেও আমাদের অন্তুর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই জাতীয় শিক্ষা পদকে আমাদের অন্তুর্ভুক্ত করার দাবি জানাই। এছাড়া আমরা পঞ্চম গ্রেড থেকে বঞ্চিত।’ এ বিষয়টিরও সমাধান করা দরকার বলে দাবি করেন তিনি।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষাকে একটি আলাদা ক্যাডারভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। কারণ, অন্যান্য সব ক্ষেত্রে ক্যাডার দেওয়া হলেও প্রাথমিক শিক্ষায় কোনও ক্যাডার নেই। ফলে বিসিএস প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার চালু করলেই এর সমাধান হয়ে যাবে। এটা খুব বেশি কঠিন কাজ নয়।’
বক্তাদের এমন বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান তাদের বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে তার আসনে বসেই ক্ষুব্ধ হন। তিনি মাইক হাতে নিয়ে বলেন, ‘আপনারা নানা দাবি-দাওয়া করছেন। ক্যাডার চাচ্ছেন, কে কোন গ্রেডে বঞ্চিত সেটা নিয়ে কথা বলছেন। কিন্তু আজকের এই কর্মশালায় মূল ফোকাস পয়েন্ট হলো মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে কী করণীয়। কেউ তো বলছেন না মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা কী? কিভাবে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে? এ কথার ধারে কাছেও তো কেউ যাচ্ছেন না। বলেন তো দেখি, মানসম্মত শিক্ষা কাকে বলে? আপনাদের মাঝে কে বলতে পারবেন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে কী করণীয়? মঞ্চে আসেন, মাইক হাতে নেন। বলেন, শুনি।
এ সময় তেজগাঁও থানা সহকারী শিক্ষা অফিসার শাহীনা আক্তার মঞ্চে ওঠে বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অনেকগুলো কম্পোনেন্ট গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক স্তরে চমৎকার একটি কারিকুলাম রয়েছে। এই কারিকুলাম গত কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। সময়োপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমানে এটার সংস্কার প্রয়োজন। এছাড়া একজন শিক্ষার্থী ততটুকুই শিখবে যতটুকু তার শিক্ষক বুঝবেন এবং ওই শিক্ষার্থীকে শেখাবেন। আর শিক্ষার্থী কতটুকু বোঝে তা সবচেয়ে ভালো বলতে পারেন একজন শিক্ষক। ফলে একজন শিক্ষকের উচিৎ ক্লাসে শিক্ষার্থীকে ভালোমতো পড়ানো।’
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, সুপার ও সহ-সুপার এবং বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালের প্রধান শিক্ষক প্রমুখ।