প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: সাড়ে তিন বছরে প্রার্থী বাড়ল দ্বিগুণ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগের গত বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ হয়েছিল ২০১৪ সালের ডিসেম্বর। সে সময় ১০ হাজার পদের বিপরীতে আবেদন জমা পড়ছিল প্রায় ১২ লাখ। আর ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ১২ হাজারের পদের বিপরীতে আবেদন পড়ল ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭। অর্থাৎ মাত্র সাড়ে তিন বছরের ব্যবধানে একই ধরনের সার্কুলারে আবেদন পড়েছে দ্বিগুণ।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারি চাকরি এমনিতেই সোনার হরিণ। তার ওপরে দীর্ঘদিন ধরে প্রাইমারির নিয়োগ বন্ধ। যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ’। তাদের ভাষ্য, প্রতিবছর দেশে শুধু গ্রাজুয়েটদের সংখ্যাই বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে বেকারের সংখ্যাও। তাই যেকোনো পরীক্ষায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলে গোটা বেকার সমাজের ওপর প্রভাব ফেলে। সদ্য আবেদনের সময় শেষ হওয়া প্রাথমিকে ২৪ লাখ আবেদন জমা- সেটাই প্রমাণ করে।
সিরাজগঞ্জের সঞ্জীব দাস নামে এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস কে জানালেন, বিগত সময়ে অর্থাৎ ২০১৪ সালের সার্কুলারে ১০ হাজারের বিপরীতে আবেদন ছিল ১২ লাখ। প্রতি আসনের বিপরীতে ১২০জন প্রতিযোগী। আর ২০১৮ সালে এসে ১২ হাজার পদের জন্য আবেদন সংখ্যা ২৪ লাখ ১ হাজার ৫৯৭। ফলে এ বছর আসনপ্রতি শিক্ষার্থীর জন্য চ্যালেঞ্জ দুইশরও বেশি নিয়োগপ্রার্থী। প্রতি বছর নিয়োগ পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের এ ধরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হত না বলেও মত দেন তিনি।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ে ‘সহকারী শিক্ষক’ নিয়োগের এই পরীক্ষা ১৯ থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যে আয়োজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যা খুব শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। ডিপিই সূত্র আরো জানায়, প্রার্থীরা http://dpe.teletalk.com.bd ওয়েবসাইট থেকে প্রবেশপত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। ওএমআর শিট পূরণের নির্দেশাবলী এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য ওয়েবসাইটে (www.dpe.gov.bd) পাওয়া যাবে।
২৪ লাখের মধ্যে কোন জেলায় কত আবেদন
এদিকে এবার রেকর্ড সংখ্যক ২৪ লাখের আবেদনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়েছে চট্টগ্রামে। সংখ্যার বিচারে যা ৯৮ হাজার ৯৬৯টি। এরপরে ময়মনসিংহে ৮৮ হাজার ২১৮টি, কুমিল্লায় ৮৪ হাজার ৭২৮টি, দিনাজপুরে ৬২ হাজার ৯৭১টি, রংপুরে ৫৯ হাজার ৭১টি, জয়পুরহাটে ১৮ হাজার ১৭৮টি, বগুড়ায় ৬৪ হাজার ৭২৭টি, নওগাঁয় ৪৯ হাজার ৮৬৩টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০ হাজার ২৭১টি আবেদন পড়েছে।
অন্যদিকে রাজশাহীতে ৫৭ হাজার ৩৮২টি, নাটোরে ৩৫ হাজার ২৫৭টি, সিরাজগঞ্জে ৫৮ হাজার ১৪৯টি, পাবনায় ৫১ হাজার ২৩১, কুষ্টিয়ায় ৩২ হাজার ৬০৯টি, মেহেরপুরে ১০ হাজার ৮৮৮টি, চুয়াডাঙ্গায় ১৮ হাজার ৬৬১টি, ঝিনাইদহে ৩৭ হাজার ৬১৭টি, মাগুরায় ২১ হাজার ৯৬২টি, যশোরে ৫৫ হাজার ৯৩২টি, নড়াইলে ১৫ হাজার ৬১৪টি, সাতক্ষীরায় ৪৫ হাজার ৬১টি, খুলনায় ৪৭ হাজার ১৮৮টি, বাগেরহাটে ৩২ হাজার ৯৭টি, জামালপুর ৫০ হাজার ৫০টি, শেরপুরে ২৫ হাজার ৪৬৬টি, নেত্রকোণায় ৪২ হাজার ৭৫৩টি, কিশোরগঞ্জে ৪৭ হাজার ৮৮৫টি, টাঙ্গাইলে ৬১ হাজার ৬৩০টি, গাজীপুরে ৩৫ হাজার ৫১৭টি, নরসিংদীতে ৩৮ হাজার ১৪৩টি, মানিকগঞ্জে ২৫ হাজার ৭১১টি, ঢাকায় ৬৪ হাজার ৫৫৮, নারায়ণগঞ্জে ২৭ হাজার ১২৭টি, মুন্সিগঞ্জে ১৮ হাজার ৭৫৯টি, রাজবাড়ীতে ২১ হাজার ৯০৬টি, ফরিদপুরে ৩৩ হাজার ৬৪৩টি, মাদারীপুরে ২৪ হাজার ৮০৭টি, শরীয়তপুরে ১৮ হাজার ৭৮৬টি, গোপালগঞ্জে ২৯ হাজার ২১৫টি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩৮ হাজার ৪০টি আবেদন পড়েছে।
এছাড়াও চাঁদপুরে ৪৬ হাজার ৯১টি, লক্ষ্মীপুরে ২৩ হাজার ৩৩০টি, নোয়াখালীতে ৪০ হাজার ৭৩৯টি, ফেনীতে ২১ হাজার ৫০১টি, কক্সবাজারে ২৬ হাজার ৭৫০টি, বরিশালে ৬১ হাজার ৮৮৩টি, পিরোজপুরে ২৯ হাজার ২৭৮টি, ঝালকাঠিতে ১৯ হাজার ১৩৮টি, বরগুনায় ২১ হাজার ৭১৭টি, পটুয়াখালীতে ৪০ হাজার ৮০৭টি, ভোলায় ২৫ হাজার ১৪৫টি, সুনামগঞ্জে ৩৫ হাজার ৫১২টি, সিলেটে ৫০ হাজার ৩৭০টি, হবিগঞ্জে ৩৩ হাজার ৪৭৫টি, মৌলভীবাজারে ৩২ হাজার ১০৬টি, পঞ্চগড়ে ২১ হাজার ৬২৯টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ৩১ হাজার ৭৯৭টি, নীলফামারীতে ৩৯ হাজার ৭৫২টি, লালমনিরহাটে ২৬ হাজার ১২২টি, কুড়িগ্রামে ৪৩ হাজার ২৯৪টি এবং গাইবান্ধায় ৫৫ হাজার ৫১৭টি আবেদন।
প্রসঙ্গত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে গত ১ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন কার্যক্রম শেষ হয়।