প্রার্থীদের ৭৫-এ ৭৫ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় জালিয়াত চক্র
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ৭৫ নম্বরের মধ্যে ৭৫ নম্বর পাইয়ে দেওয়া হবে— এমন শর্তে জালিয়াত চক্রকে ‘ব্ল্যাঙ্ক’ চেক দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষার ফলের পর প্রতিটি ঢেকে ১০-১৫ লাখ টাকা আদায় করা হতো। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) তিনটি বিভাগের ১৮টি জেলায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয়। পরীক্ষায় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাকে টার্গেট করে অনেক দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় হয়। সরকারি চাকরিজীবী, কলেজ শিক্ষক ও অসাধু রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের বাছাই করা হয়েছে।
তাদের সঙ্গে 'চুক্তি' ছিল লিখিত পরীক্ষায় শতভাগ নম্বর পাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। শতভাগ নম্বর পাওয়ার পর পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার কথা ছিল। প্রতিটি চেকে ১০-১৫ লাখ টাকা আদায় করার কথা ছিল প্রার্থীদের থেকে।
আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জনপ্রতি ১০-১৫ লাখ টাকায় চুক্তি
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অর্থ-সম্পদের তথ্য নেওয়া হবে। বৈধ আয়ের সঙ্গে অর্থসম্পদের গরমিল পেলে মানি লন্ডারিং মামলাও হবে। এ ছাড়া এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। গাইবান্ধায় গ্রেপ্তার ৩৭ জনের মধ্যে ২৪ জন নারী। তাদের কারও কারও সঙ্গে ছোট সন্তান রয়েছে।
জানা গেছে, র্যাবের হাতে গাইবান্ধায় ৩৭ জনের যে চক্রটি ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে সমন্বয়ক হিসেবে দুজন দায়িত্ব পালন করেন।
তারা হলেন- নজরুল ইসলাম ও সোহাগ মিয়া। নজরুল কলেজশিক্ষক। এ ছাড়া এই চক্রের সঙ্গে বগুড়ায় কাজল নামে একজন ছিলেন। বিভিন্ন জেলায় প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত কয়েকজন গ্রেপ্তারের পর কাজল গা-ঢাকা দিয়েছেন। একই গ্রুপের এর আগেও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য মিলেছে।
গাইবান্ধায় র্যাবে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সিন্ডিকেটে যুক্ত, তাদের অনেকের কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেক জব্দ করা হয়েছে। প্রার্থীদের কাছ থেকে এসব নিয়ে রেখেছিল তারা। এ ছাড়া জব্দ করা মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক সামগ্রীর ফরেনসিক পরীক্ষা করলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।