নবীজির নামে বিশ্ববিদ্যালয়, অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে আবেদন!
বরগুনার আমতলীতে নামসর্বস্ব একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে বিদ্যালয়ের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে জমিদাতা ও তাদের ওয়ারিশদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ‘বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স:) জীবন আদর্শ অধ্যয়ন বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে নামসর্বস্ব ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) আবেদনও করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আমতলীর গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর গোছখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
অভিযুক্তের নাম কুদ্দুস হাওলাদার। তিনি গুলিশাখালী ইউনিয়নের উত্তর গোছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা পরিবারের অন্যতম সদস্য। অথচ তিনিই স্কুলের জমি দখল করে পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন এবং সেখানে নবীজির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছেন বলে অভিযোগ।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ১৪ আগস্ট আমতলী উপজেলার উত্তর গোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৬৪ শতাংশ জমি দান করেন আব্দুল জব্বার মিয়া, আ. লতিফ মিয়া ও আ. মতিন মিয়া। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরকারি খাতায় স্কুলের ৬৪ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ ছিল। যা স্কুলের পক্ষ থেকে ভূমি অফিসে ওই পরিমাণ জমির খাজনাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু জমিদাতা এবং তাদের ওয়ারিশরা নির্ধারিত জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা না করে এক কিলোমিটার উত্তরে গোজখালী- কলাগাছিয়া পাকা সড়কের পশ্চিম পাশে এর ভবন নির্মাণ করেন। বিষয়টি দীর্ঘসময় ধরে গোপন ছিল।
সম্প্রতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা নুরুন্নাহারকে অন্যত্র বদলির পর বেরিয়ে আসে সেই তথ্য।
গ্রামবাসী জানতে পারে, উত্তর গোজখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্ধারিত স্থানে প্রতিষ্ঠা না করে অন্য জমিতে করা হয়েছে।
এরপরেই সামনে চলে আসে স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদার কুদ্দুস হাওলাদার স্কুলের জন্য নির্ধারিত জমি দখল করে মাছ চাষ ও নবীজির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড টানিয়ে জমি দখলের বিষয়টি।
দলিলে উল্লেখিত জমিতে স্কুল নির্মাণ না হওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন জমিদাতা ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আ. জব্বার মিয়া।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে জমিতে স্কুলটি রয়েছে সেটাও ওয়ারিশসূত্রে আমাদের। আমরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, দলিলে উল্লেখিত জমিতে স্কুল নির্মাণ না করে বর্তমানে যেখানে আছে সেখানে প্রতিষ্ঠার।
অপর জমিদাতা ও ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আ. মতিন মিয়া বলেন, স্কুলের নামে দান করা রেজিস্ট্রি দলিলে উল্লেখিত দাগের জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়নি এটা সত্যি। তবে এখন যে জমিতে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাও আমাদের পারিবারিক জমি। ওই দলিলে উল্লেখিত ৬৪ শতাংশ জমি আমাদের একই বংশের আ. কুদ্দুস হাওলাদারের দখলে থাকায় সেখানে তিনি পুকুর কেটে মাছ চাষ ও ‘বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (স:) জীবন আদর্শ অধ্যয়ন বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি সাইনবোর্ড টানিয়েছেন।
উত্তর গোছখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য ডেপুটেশনে বদলি হওয়া সাবেক প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল এবং নির্দিষ্ট জমিতে ভবন নির্মাণ না হওয়ার বিষয়টি ফাঁস করে দিলে জমিদাতারা ষড়যন্ত্র করে আমাকে বদলি করিয়েছে।
দখলদার আ. কুদ্দুস হাওলাদার পুকুর কেটে মাছ চাষ ও নবীজির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড লাগানোর কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ওই স্কুলের কোনো জমি দখল করিনি। স্কুলে দানকৃত জমি আমার জমির পেছনে বিলের মধ্যে রয়েছে।
সাইনবোর্ড সাঁটানোর বিষয়ে তিনি বলেন, নবীজির নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে আবেদন করা হয়েছে। তাই আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে।
জানতে চাইলে জমিদাতা ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আলহাজ আ. জব্বার মিয়া বলেন, যে জমিতে স্কুলের ভবন নির্মিত হয়েছে, সেটির মালিক আমরা। পারিবারিকভাবে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েই দান করা জমির পরিবর্তে এই জায়গায় স্কুলের জন্য ভবন করা হয়েছে।
অপর জমিদাতা ও সহকারী শিক্ষক আ. মতিন মিয়া বলেন, দলিলে উল্লিখিত ৬৪ শতাংশ জমি আমাদের একই বংশের আ. কুদ্দুস হাওলাদারের দখলে আছে।
সদ্য ডেপুটেশনে বদলি হওয়া প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল এবং নির্দিষ্ট জমিতে ভবন নির্মাণ না হওয়ার বিষয়টি ফাঁস করে দিলে জমিদাতারা ষড়যন্ত্র করে আমাকে বদলি করিয়েছেন।
শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম বলেন, জমি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, স্কুলটি পরিদর্শন করে জমি উদ্ধার ও দখলদারকে উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।