০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:১৩

রাতারাতি উধাও স্কুল, খোলা আকাশের নীচে পাঠদান

খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে বিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীরা  © টিডিসি ফটো

ভোলার চরফ্যাশনে রাতের আঁধারে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি আসবাবপত্রসহ স্কুলঘর ভেঙে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে গেছে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। ‍যদিও খোলা আকাশের নিচে একটি বাড়ির উঠানে কোন রকমে চালানো হচ্ছে ক্লাস কার্যক্রম। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলেও দশ দিনেও মেলেনি কোন সমাধান।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ঘরের ভিটায় গাছ লাগিয়ে কাঁটা তারের বেড়া দেয়া। নির্মাণাধীন নতুন ভবন ঘিরে রেখেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতির বিশেষ পাহাড়াদাররা। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ির উঠানে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান কার্যাক্রম। এসময় দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা চলার কথা থাকলেও ভবনের অভাবে পরীক্ষা নিতে পারছেন না শিক্ষকরা।  

জানা যায়, ভোলার চরফ্যাশনের চর মানিকা ইউনিয়নে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা হয় “মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়”। অস্ট্রেলিয়ান উন্নয়নকর্মী ফ্রেইড হাইড চরফ্যাশনের পিছিয়ে পড়া দুর্গম এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে এমন ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৭টি কিন্ডার গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। যা প্রান্তিক শিশুদের শিক্ষায় ভূমিকা রাখছে।

গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত নিজস্ব টিনের ঘরেই ওই স্কুলের (চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের) দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৭ আগস্ট রোববার সকালে শিক্ষাক-শিক্ষার্থীরা এসে দেখেন স্কুল ঘরের চিহ্ন নেই। ভিটিতে সুপারি গাছ লাগিয়ে কাঁটা তারের বেঁড়া দেয়া। মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা। অনিশ্চয়তা দেখা দেয় বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনা করা নিয়ে। এতে হতাশ শিক্ষার্থী অভিভাবরা।

কো-অপারেশন ইন ডেভেলপমেন্ট (কো-ইড) চরফ্যাশনের  পরিদর্শক  এন এম আলমগীরের অভিযোগ,২০২০ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ওই স্কুলের নামে সাইক্লোন সেল্টার কাম স্কুল ভবন বরাদ্দ হয়। ভবনের কাজে শেষ পর্যায়ে আসলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বশির উল্লাহ মিয়া ২৫ আগষ্ট স্কুলের টিনের ঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায়। একই সাথে পূর্ব চর আইচা আর্দশ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন নামে স্কুলের আরেকটি কমিটি তৈরী করে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য করছেন।

তবে স্কুলের সাবেক সভাপতি ও অভিযুক্ত বশির উল্লাহর দাবি, তিনি অন্যায়ভাবে কিছু করেন নি। কো-ইড বিদ্যালয়ের অস্থায়ী ঘর ছিলো, যা ঠিকাদারের লোকজন ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখন তিনি আইনিভাবে মোকাবেলা করবেন।

এদিকে স্কুলঘর ভেঙ্গে নেয়ার অভিযোগে কো-ইডের  বিদ্যালয় পরিদর্শক এম এন আলমগীর গত ২৭ আগষ্ট বাদী হয়ে মো.বশির উল্লাাহ মিয়াসহ ৪ জনের নাম উলেখ্য করে  দক্ষিণ আইচা থানায় একটি মামলা করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মাসুম বিল্লাহ। 

আর জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান শিক্ষা কর্মকর্তা।
 
বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৫৭ জন ছাত্র-ছাত্রীর পাঠদানের জন্য চারজন শিক্ষক কর্মরত আছেন। কো-অপারেশন ইন ডেভেলপমেন্ট অস্টেলিয়া (কো-ইড) শিক্ষকদের বেতন ভাতা দিয়ে থাকেন।

মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সনে চরমানিকা ইউনিয়নের চর আইচা গ্রামে অস্ট্রেলিয়ন সংস্থার আর্থয়ানে মধ্য চরআইচা কো-ইড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর ৫ জন শিক্ষক দিয়ে স্কুলটি পরিচালিত হয়ে আসছিলো। কিন্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বশির উল্লাহ মিয়া রাতের আঁধারে বিদ্যালয়ে টিসসেট ঘরটি ভেঙে নিয়ে যাওয়া বিপাকে পরেছে শিক্ষার্থীরা। স্কুল সংলগ্ন বাড়ির উঠানে খোলা আকাশের নিচে ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলছে দেড়শ শিশু শিক্ষার্থীর শ্রণীপাঠ কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগের  কথা চিন্তা করে করে দ্রুত সময়ের সময়ের মধ্যে স্কুলটি একই জায়গায় বহাল রাখার দাবী জানান তারা।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মামুন ট্রেডার্সের প্রোভাইটর ইউনুস আল মামুন স্কুল ঘরটি ভেঙে ফেলার কথা অস্বীকার করে জানান, আমরা কো-ইড স্কুল কেন ঘর ভেঙে ফেলবো। এখনও তো ভবনের কাজ সমাপ্ত হয়নি।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল মতিন খান জানান, এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।