২৬ জুন ২০২৩, ০৯:৩৪

প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে ফেল করবে ধারণা শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের

শিক্ষার্থী  © সংগৃহীত

প্রাইভেট টিউটরের কাছে না পড়লে অপ্রত্যাশিত সমস্যাসহ ফেল করার ধারণা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা গাইবান্ধা, ঠাঁকুরগাও ও নীলফামারীর ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০৮ জন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকের ওপর জরিপ করে প্রাথমিক শিক্ষার এই তথ্য জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম।

রোববার (২৫ জুন) কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে আয়োজিত এক জাতীয় সম্মেলনে এই জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়।

জরিপের তথ্য বলছে, জরিপ পরিচালনা করা শিক্ষার্থীদের এক–তৃতীয়াংশের বেশি অপ্রত্যাশিত সমস্যা এড়াতে ‘প্রাইভেট টিউরের' কাছে পড়ে। সম্মেলনে জরিপের ফলাফল নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডিরি জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

‘প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ, স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও করণীয়’ শীর্ষক এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা করেন, কিন্তু সফলতার স্বীকৃতি দেবেন না?’ এসময় এসব কাজে স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাজুল ইসলাম।

প্রবন্ধে বলা হয়, গাইবান্ধা এবং নীলফামারিতে দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে জাতীয় হারের প্রায় দ্বিগুণ এবং ৮ শতাংশ বেশি। তবে ঠাকুরগাঁও জেলায় এই হার জাতীয় হারের চেয়ে কম। এছাড়া বাল্যবিবাহের হার গাইবান্ধা জেলায় জাতীয় হারের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ৩০টি বিদ্যালয়ের ১৪টিতে ৫টির কম শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকের গড় সংখ্যা ছিল ৬ অর্থাৎ ২৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক। প্রায় ২৫ শতাংশ অংশীজন জানিয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই ২২টি বিদ্যালয়ে কোনো ধরনের গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা নেই। উত্তরদাতাদের কাছ থেকে ইংরেজি ও গণিত শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ দুর্বলতার কথাও জানা গেছে।

আলোচনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শিরীন আখতার প্রাথমিক শিক্ষায় বাজেট দিন দিন বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো ও এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সঞ্চালকের বক্তৃতায় বলেন, দেশে স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষা জোরদার করার উদ্যোগ সরকারের আছে। আবার চ্যালেঞ্জও আছে।

গুণগত মানসম্মত শিক্ষকের ওপর গুরুত্বারোপ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, উন্নত মানের শিক্ষক দরকার। শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে চাকরির সর্বশেষ পছন্দ হলে এগোনো যাবে না। শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রথম বা দ্বিতীয় পছন্দ হওয়া দরকার।

আরও পড়ুন: দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ নেই

শিক্ষা আসলে একটি বিনিয়োগ। আমরা যদি এই বিনিয়োগ করি তাহলে পরবর্তী সময়ে মিনিংপুল রিটার্ন দেবে বলে মন্তব্য করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্রাকের শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের কর্মসূচি প্রধান সমীর রঞ্জন নাথ, ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ উজ জামান, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের এডুকেশন গ্লোবাল প্র্যাকটিসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সাঈদ রাশেদ আল জায়েদ যশ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি কাউন্সেলর ইউরাতে স্মলস্কাইট মার্ভিল ও নাদিয়া রশীদ প্রমুখ।

এছাড়াও জরিপ পরিচালনা করা তিন জেলা গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারী থেকে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ এবং অন্যান্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।