২৫ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৬

৫১ বছরেও স্কুলে নিয়মিত হাসিনা খাতুন, পড়ছেন পঞ্চম শ্রেণিতে

৫১ বছরেও স্কুলে নিয়মিত ঝিনাইদহের হাসিনা খাতুন  © সংগৃহীত

শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে ৫১ বছর বয়সেও নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন ঝিনাইদহের হাসিনা খাতুন। শেখার কোনও বয়স নেই। এই বয়সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে তা-ই যেন প্রমাণ করলেন তিনি। হাসিনা খাতুনের ভাষায় যার ভেতরে শিক্ষার কোনো আলো নেই, সে অন্ধকারে রয়েছে। তাই তিনি এই বয়সেও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে চান।

ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়া হয়নি হাসিনা খাতুনের। অভাবের কারণে দ্রুত বিয়েরপিঁড়িতে বসতে হয়। সংসারের বেড়াজালে আটকে যায় জীবন। সেই থেকে সংসার ছেলেমেয়ে নিয়ে হাসিনার ব্যস্ততম জীবন। তার সংসারে স্বামী এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের বিয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি নিজে লেখাপড়া না জানলেও ছেলেকে বানিয়েছেন গ্র্যাজুয়েট।

তার স্বামী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের আব্দুল কাশেম। হাসিনা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসিনা খাতুনের ইচ্ছা ছিল সে লেখাপড়া করবেন। এই বয়সে চাকরি কিংবা অন্য কোনো কারণে তিনি লেখাপড়া করতে চান তা নয়। জ্ঞানার্জন করায় তার আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু সময়-সুযোগ আর হয়ে উঠছিল না হাসিনা খাতুনের। পাশের বাড়ির এক পুত্রবধূর কাছে পরামর্শ করে ভর্তি হয়ে যান প্রাইমারি স্কুলে। তার লেখাপড়া করার ইচ্ছা দেখে শিক্ষকরা ভর্তি করে নেন তাকে।

আরও পড়ুন: ৭০ বছর বয়সে এসে পণ ভাঙলেন শিক্ষক শওকত আলী

হাসিনা খাতুন এখন ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। ৫ম শ্রেণিতে মোট ৩৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে তার রোল ২৭। বাড়ির কাজ শেষ করে প্রতিদিনই স্কুলে আসেন হাসিনা খাতুন। লেখাপড়ায়ও খুব মনোযোগী তিনি। তার সঙ্গে পড়া সহপাঠীরাও খুব খুশি তাকে পেয়ে। 

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন জানান, সহপাঠীরা তাকে কেউ দাদি আবার কেউ চাচি বলে ডাকে। অবসর সময় তাদের মাঝে মাঝে বিভিন্ন গল্প শোনান। তাদেরও ভালো সময় কাটে। প্রতিদিন তাদের সঙ্গেই স্কুলে আসেন হাসিনা। আবার স্কুল ছুটি হলে একসঙ্গেই বাড়ি যান।

স্কুলটির শিক্ষক সীমা রানী ভট্টাচার্য বলেন, লেখাপড়ার প্রতি হাসিনা খাতুনের খুব আগ্রহ। তিনি নিয়মিত স্কুলে আসেন। লিখতে ও পড়তে পারার জন্য তিনি স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। এখন তিনি সবই পারেন। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে খুবই সহযোগিতা করেন। 

ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোমেনা বেগম বলেন, এই বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়ে নিয়মিত ছাত্রী হওয়া সত্যিই বিরল। হাসিনা খাতুনের লেখাপড়ার প্রতি খুবই আগ্রহ। তার আগ্রহের ফলে তাকে ভর্তি নিয়েছি। সংসার সামলে নিয়মিত স্কুলে আসেন তিনি। শিক্ষকরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। যারা লিখতে ও পড়তে পারেন না তারা হাসিনা খাতুনের মতো স্কুলে আসলে দেশ নিরক্ষরমুক্ত হবে।