বিদ্যালয় ডুবলো নদীতে, খোলা আকাশের নিচে ক্লাস শিক্ষার্থীদের
এক মাস ধরে অন্যের বাড়ির উঠানে খোলা আকাশের নিচে চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। আসবাব না থাকায় একজন শিক্ষক পাঠদান করলে অন্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এ চিত্র তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাওয়া কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাতা লস্কর সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টি উপজেলা সদর থেকে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের অন্যের বাড়ির উঠানে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান করছেন চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ।
শিক্ষক আবুল কালাম জানান, দেড় মাস আগে বিদ্যালয়টি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সামান্য কিছু আসবাব রক্ষা করা গেলেও বাকি সম্পদ রক্ষা করা যায়নি। বিদ্যালয়ের স্থান না থাকায় বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়ির উঠানে ক্লাস নিতে হচ্ছে। বিদ্যালয়টি নতুন করে স্থাপনের জন্য তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু জমি না পাওয়ার কারণে বিদ্যালয়ের ঘর নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, ‘১৯৭৯ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয় এবং ২০১৩ সালে সরকারীকরণ হয়। এ পর্যন্ত তিনবার বিদ্যালয়টি তিস্তার ভাঙনে পড়ে। বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই বিদ্যালয়ে আসছে না। বর্তমানে আমিসহ বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক রয়েছেন।’
আরও পড়ুন: নদী বাঁচাতে ৭ ব্যান্ড নিয়ে 'নদী রক্স'
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিকা খাতুন জানায়, উঠানে বসে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে আমাদের কষ্ট হয়। ধুলাবালি লেগে বইপত্র, জামা-কাপড় নষ্ট হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়টি নদীতে চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষক নাজমুল হোসেন ও দোলনা রানী রায় জানান, এই উঠানটুকুই আমাদের ভরসা। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরভানু বেগম জানান, এখন যেখানে ক্লাস চলছে, তার পাশের জমিটি বিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্রুত এটি নিবন্ধন করা হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাদিরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর এই উপজেলায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে কোনো না কোনো স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়। এ বছরও সাতা লস্কর সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ তিনটি বিদ্যালয় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষা কমিটি ও উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ওই বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।