প্রথম ধাপে ইউনিক আইডি পাচ্ছে ৮০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত তিন কোটির বেশি শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি বা একক পরিচয়পত্র প্রদানের কাজ অবশেষে শুরু হয়েছে। তবে সবার আগে ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাবে ইউনিক এই আইডি।
এ আইডিতেই একজন শিক্ষার্থীর পুরো শিক্ষা জীবনের তথ্য থাকবে এবং বিভিন্ন প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করতে পারবে। তাছাড়া এ আইডির তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়া হবে। নতুন করে তাকে নিবন্ধিত হতে হবে না।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস (সিআরভিএস) বাস্তবায়নের আলোকে তিন কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীর জন্য ইউনিক আইডি (একক পরিচয়) দেওয়া হবে। এই আইডিতে ১০ বা ১৬ ডিজিটের শিক্ষার্থী শনাক্ত নম্বর থাকবে। এসব তথ্য পরবর্তীতে শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি ও সংরক্ষণের জন্য গত ২৪ মে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার ৮০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরির কাজ পাইলটিং করা হবে। এটি সফল হলে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এর আওতায় আনা হবে। তাদের পর্যায়ক্রমে নতুন এ আইডি দেওয়া হবে।
সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি ও একক ইউনিক আইডি প্রদানের ফলে তার পরবর্তী শিক্ষা জীবনে ভর্তি, বদলি, বৃত্তি, জাতীয় পরিয়পত্র, চাকরি, জাতীয় সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান, বিয়েসহ বিভিন্ন কাজে এটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়েছে। দফায় দফায় এ কাজ পেছালেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও তীতে শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রদানের এখন তা বাস্তবায়ন হওয়ার পথে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রথম শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি ও একটি ইউনিক আইডি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ‘মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়। পর্যায়ক্রমে সব স্তরের শিক্ষার্থীকে এর আওতাভুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল তখন। ২০১৭ সালে ৯টি অঞ্চলে পাইলট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। তবে অদৃশ্য কারণে সে উদ্যোগ আটকে গিয়েছিল সেখানেই।
এর বছর দুয়েক পর ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে আবারও তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্যানবেইজের পরিচালনায় সমন্বিত ‘শিক্ষা ও তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রোজেক্ট’ নামে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ডাটাবেস ও ইউনিক আইডি দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে তাও বাস্তবায়ন হয়নি। তখন পরিকল্পনা ছিল, শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর হলে তার কথা জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ভাণ্ডারে সংযুক্ত হবে। ফলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর পাওয়া সহজ হবে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য থাকলে ভবিষ্যতে তারা যখন উচ্চশিক্ষায় যাবে তখনো তার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা সরকারের জন্য সহজ হবে।
ইউনিক আইডির বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ইউনিক সংগ্রহ সহজীকরণ ও সংরক্ষণে আমরা আলাদা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ প্রকল্পের আওতায় পাইলটিং হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানের ৮০টি বিদ্যালয়ের শিশুদের ইউনিক আইডি তৈরি করা হবে। সেটি সফল হলে ধাপে ধাপে সব শিক্ষার্থীকে এটির আওতায় আনা হবে।