প্রাথমিকেও আসছে অটোপাস

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ফটো

দেশে চলমান করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ৩০ দিনের অ্যাসাইনমেন্টের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হলেও ছুটি বাড়ানোয় সেটিও আলোর মুখ দেখছে না। এছাড়া বিদ্যালয় না খোলায় স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সুযোগ পাচ্ছে না।। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও অটোপাসের মাধ্যমেই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করেছে, বিদ্যালয় খোলা না গেলে সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডিসেম্বরে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। তখন সংক্রমণও বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঝুঁকি নেবে না সরকার। ফলে বিদ্যালয় না খুললে প্রাথমিকে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে যে মূল্যায়ন করার কথা ছিল সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তখন ছাত্র-ছাত্রীদের অটোপাস দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলমান ছুটি ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর থেকে যদি বিদ্যালয় খোলা যায় তাহলে আমাদের হাতে ১১ দিন সময় থাকবে। তখন আমরা অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে আামাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করতে পারবো। তবে ১৯ ডিসেম্বরের পর যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হয় তখন নিজ নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করবেন।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. বদরুল আলম মুকুল। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে স্ব স্ব বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবে। তবে স্কুল না খুললে আমাদের মূল্যায়নের সুযোগ নেই। যদি ডিসেম্বর মাসেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলো তাহলে হয়তো সবাইকে অটোপাসই দিতে হবে।

এদিকে করোনার প্রকোপ না কমায় ১৯ ডিসেম্বরের পরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ইতোমধ্যেই শীত আসতে শুরু করেছে। আর আসন্ন শীতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের জীবনের কথা চিন্তা করে এ বছর আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। তাই নেপ যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করেছে সেটিও বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে অটোপাসই এখন একমাত্র উপায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সদ্য নিযুক্ত মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, নেপের পক্ষ থেকে আমাদের ৩০ দিনের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস দেয়া হয়েছিল। তবে যেহেতু চলমান ছুটি ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে ৩০ দিনের পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আর সম্ভব হবে না। তবে ২০ ডিসেম্বর আমাদের বিদ্যালয় খুললে তখন আমরা যে কয়দিন পাই সে কয়দিনেরই অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করতে চাই।

১৯ ডিসেম্বরের পর যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা হয় তখন কি অটোপাসের ঘোষণা দেয়া হবে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছুটি বাড়ানো কিংবা অটোপাস এ বিষয়ে অধিদপ্তর কোনো মন্তব্য করতেক পারে না। এটি মন্ত্রণালয়ের বিষয়। মন্ত্রণালয় অমাাদের যেভাবে নির্দেশনা দেবে আমরা সেটি বাস্তবায়ন করবো।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মাধ্যমে মূল্যায়নে পাঠ পরিকল্পনা দিয়েছিল নেপ। সেখানে ১ অক্টোবর  স্কুল খুললে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। আর ১ নভেম্বর থেকে স্কুল খুললে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল। সেক্ষেত্রে ৪০ দিন ক্লাস নেওয়া সম্ভব হতো। সবশেষ ১৫ নভেম্বর থেকে বিদ্যালয় খুললে ৩০ দিনের পাঠ পরিকল্পনা দিয়েছিল নেপ। তবে চলমান ছুটি বৃদ্ধি করায় সেটিও বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।


সর্বশেষ সংবাদ