শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
প্রশাসনিক ও আর্থিক নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাটের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ভুয়া স্মারকে পদায়ন, বদলি ও ভুয়া ভাউচারে বিল উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ছুটিজনিত অনুপস্থিতি এবং যোগদানের পরও ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব নিয়ে তিনি এসব অপকর্ম করেন বলে অভিযোগ।
বিধিবহির্ভূতভাবে শিক্ষক পদায়ন ও বদলি করায় মোটা অংকের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে হয়রানির ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না তাদের কেউ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এস এম তৌফিকুজ্জামান গত ২০ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য ছুটি নিয়ে ভারতে যান। তার অনুপস্থিতিতে দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে জেষ্ঠ্য সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলামকে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি অফিস আদেশ প্রদান করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নার্গিস সাজেদা সুলতানা। একই সাথে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যোগদানের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ভারপ্রাপ্তের এ আদেশ বাতিল বলে গন্য হবে মর্মেও জানানো হয় ওই আদেশে।
কিন্তু জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান ২৪ ফেব্রুয়ারি কাজে যোগদান করলেও সাইফুল ইসলাম সেই থেকেই অবৈধভাবে অফিসের প্রশাসনিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। ভুয়া স্মারক ব্যবহার করে শিক্ষকদের অবৈধভাবে খেয়াল খুশিমত পদায়ন, বদলি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অগ্রগায়ন ও লিপিবদ্ধকরণ সহ একের পর এক অফিস আদেশ জারি করছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা কর্মকর্তা হিসেবে।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের সহকারী শিক্ষকদের দুই দিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন কর্মশালার বিনা ভেন্যু খরচে সম্পন্ন হলেও অনৈতিকভাবে ভুয়া ভাউচারে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগদানের পর সাইফুল ইসলামের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেষ হয়। কিন্তু সাইফুল ইসলাম দুই দিনের ওই ওরিয়েন্টেশন কর্মশালায় ভ্যাট সহ এক লাখ ৮৩ হাজার ৪২৫ টাকা খরচ দেখিয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি সমুদয় বিল তুলে নিয়েছেন।
অভিযোগে রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়ে সাইফুল ইসলাম সদ্য চাকরি পাওয়া জেলায় ৯১ জন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক পদায়নের অফিস আদেশ প্রদান করেন গত ১৮ ফেব্রুয়ারি। পরে সেই আদেশ বাতিল না করে খেয়ালখুশি মতো পদায়নের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শিক্ষকদের কাছ থেকে।
দুই বছর আগে যোগদান করা জেলার পাঁচবিবি উপজেলার সদ্য জাতীয়করণ করা দোঘড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারজানা বেগমকে আবেদন ছাড়াই ২২ কিলোমিটার দূরে মোলান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সদ্য জাতীয়করনকৃত দোঘড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মেহেদি হাসানকে স্বপদে বহাল রাখতে সাইফুল ইসলাম শিক্ষক ফারজানা বেগমকে অন্যায়ভাবে বদলি করেছেন।
এ বিষয়ে ফারজানা বেগম বলেন, আমি বদলির জন্য কোনো আবেদন করিনি। আমার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা ঘুষ চাওয়া হয়েছিল। আমি দেইনি। তাই আমাকে বাড়ি থেকে ২২ কিলোমিটার দুরে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে।
অসুস্থতাজনিত ছুটি শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌফিকুজ্জামান যোগদান করার পরও সাইফুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে অন্তত ১৫ জন শিক্ষককে অবৈধ আদেশে বদলি করে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
আর্থিকসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা যোগদান করলেও তার অসুস্থতার কারণে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। আমার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো সত্য নয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম তৌফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, অসুস্থতা জনিত কারণে ছুটি ভোগের পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যোগদান করেছি। যোগদানের পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে অন্য কারও দায়িত্বে থাকার কথা নয়।