নতুন বিজ্ঞপ্তি আসছে প্রাথমিকে, প্যানেল নিয়োগের সুযোগ নেই
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৫৬ হাজার ৯৩৬ প্রার্থী গত এক বছর ধরে প্যানেল শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের দাবি করে আসছেন। তবে আগামী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৬ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ঘোষণা আসায় প্যানেলপ্রত্যাশীদের সেই দাবি ভেস্তে যাচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় ২৬ হাজার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক ও ১০ হাজার শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে ওয়েবসাইট সংস্কারের কাজ চলছে। ওয়েবসাইটের আধুনিকায়নের ফলে প্রার্থীরা আবেদন করার পর সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ব্যক্তিগত ও একাডেমিক তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে। এতে আবেদন যাচাই-বাছাই করতে সময়ক্ষেপণ হবে না।
এদিকে অক্টোবরে নতুন বিজ্ঞপ্তির ঘোষণা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন প্যানেলের দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, সব যোগ্যতা থাকার পরও শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় অল্প কিছু নাম্বারের জন্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
তাদের ভাষ্য, এর আগে ২০১৪ সালে প্যানেলের মাধ্যমে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে তারা কেন বঞ্চিত হবেন। এছাড়া ২০১৮ সালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের বেশিরভাগেরই চাকরিতে আবেদনের বয়স শেষ হয়ে গেছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নতুন বিজ্ঞপ্তির ঘোষণা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন রবিবার সন্ধ্যায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্যানেল গঠন করে নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। নিয়োগ প্রক্রিয়া কোনভাবেই বাতিল করা হবে না। যথা সময়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
২০১৪ সালে প্যানেল করে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের আগে যাদের প্যানেল করা হয়েছিল, তাদের মামলা শেষ হওয়ার পর সবাইকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্যানেল গঠন করে নিয়োগের কথা উল্লেখ ছিল। ২০১৮ সালের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে প্যানেলের কথা উল্লেখ করা নেই। তাই প্যানেল গঠনের কোনো সুযোগ নেই। এখন নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, মামলা জটিলতায় আটকে থাকার দীর্ঘ চার বছর পর ২০১৮ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সারাদেশ থেকে ১৮ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় ৫৫ হাজার ২৯৫ জন উত্তীর্ণ হন। আর ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে প্রায় ৩৭ হাজার ১৪৮ জন নিয়োগ বঞ্চিত হন।
এ প্রসঙ্গে ডিপিই মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ জানান, আমরা সব সময় স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক জটিল। এখানে যারা সেরা তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হয়। ফলে ২০১৮ সালে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যারা মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করেছে তাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। নিয়োগ বিধির বাইরে অন্যভাবে নিয়োগের কোনও সুযোগ নেই।
তথ্যমতে, ২০১৪ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে ২০১০ ও ২০১১ সালের পুল ও প্যানেলভুক্ত প্রার্থীরা তাদের নিয়োগ নিশ্চিতের দাবিতে উচ্চ আদালতে ৪৯০টি রিট আবেদন করেন। আবেদনে পুল ও প্যানেলভুক্ত নিয়োগের অপেক্ষায় থাকাদের নিয়োগ নিশ্চিত না করে কেন নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়।
রিট আবেদনের পর ২০১৪ সালের নিয়োগ স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। চার বছর পর ২০১৮ সালে রিট আবেদনের নিষ্পত্তি হলে আবেদন করা প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ প্রার্থী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ২৯ হাজার ৫৫৫ জন। তবে নিয়োগ দেওয়া হয় ৯ হাজার ৭৬৭ জনকে। উত্তীর্ণ ১৯ হাজার ৭৮৮ জন প্যানেলভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন।
একই বছর আবার শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়মিত ওই বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন করেন ১৮ লাখ ৮৬ হাজার ৯২৭ জন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ৫৫ হাজার ২৯৫ জন। নিয়োগ দেওয়া হয় ১৮ হাজার ১৪৭ জনকে। উত্তীর্ণ ৩৭ হাজার ১৪৮ জন পুল বা প্যানেলভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।