নতুন শিক্ষাক্রম সংশোধন-শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ একগুচ্ছ দাবিতে মানববন্ধন
নতুন শিক্ষাক্রম সংশোধন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার গঠন, প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রশাসন ক্যাডারমুক্ত করাসহ এক গুচ্ছ দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ‘বৈষম্য নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার’ ও ‘বৈষম্যবিরোধী প্রাথমিক শিক্ষক সমন্বয় পরিষদ’ নামের দুইটি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে দাবি দাওয়া তুলে ধরেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
মানববন্ধনে শিক্ষক-কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপপরিচালকের মত শীর্ষ পদের দায়িত্ব পেয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নানাভাবে বঞ্চিত করেন। তাই তারা প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার গঠন করার দাবি জানান। একইসঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রমকে ‘জনবিচ্ছিন্ন ও গ্রহণযোগ্যতাবিহীন’ বলে আখ্যায়িত করে তা সংশোধনের দাবি জানান। আর আহ্বান জানান প্রাথমিক শিক্ষাকে দুর্নীতিমুক্ত করার।
কর্মকর্তাদের পক্ষে গাজীপুরের সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইশরাত নাসিমা হাবীব দাবি দাওয়া উপস্থাপন করেন। অপরদিকে শিক্ষকদের পক্ষে দাবি দাওয়া উপস্থাপন করেন মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি।
কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে শিশু অধিকার বাস্তবায়ন, শিক্ষা সংস্কারকে অগ্রাধিকার দেয়া, প্রাথমিক শিক্ষার কারিকুলাম দ্রুত সংশোধন, কারিকুলামের সঙ্গে সমন্বয় করে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক প্রশিক্ষক কারিকুলাম প্রস্তুত করা, প্রাথমিকের কর্মকর্তা, কর্মচারী শিক্ষকদের নিয়োগবিধি বাতিল, এন্ট্রিপদ থেকে মহাপরিচালক পর্যন্ত শতভাগ পদোন্নতির বিধান রেখে প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার গঠন, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশাসন ক্যাডারমুক্ত করা, প্রাথমিক শিক্ষাকে দুর্নীতিমুক্ত করা, প্রাথমিক শিক্ষার সব অপচয় রোধ করা ও প্রকল্পগুলোর অপচয় ও দুর্নীতি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে জবাবদিহিতার আওতায় আনা।
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো দাবিগুলো হল, সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া, প্রধান শিক্ষক পদের বেতন ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে সরাসরি নিয়োগ বন্ধ করা, প্রাথমিককে নন-ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্ট ঘোষণা করা, সহকারী শিক্ষক পদে ৫ বছরের অভিজ্ঞতায় প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া, প্রয়োজনে সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দেয়া, সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা ইউআরসির সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদ থেকে ঊর্ধ্বতন সব পদ (প্রাথমিক শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করা, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউআরসির সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে শিক্ষকদের থেকে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া, শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া সারাবছর চালু করে সহজ করা ও পারস্পারিক বদলি চালু করা, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টা র্নিধারণ, শিক্ষকদের শিখন শেখানো ছাড়া অন্য কাজে যুক্ত না করা, প্রতিটি প্রাইমারি স্কুলে দপ্তরি ও কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ, দপ্তরি-কাম-প্রহরীদের চাকরি জাতীয়করণ, শিক্ষার্থীবান্ধব কারিকুলাম প্রণয়ন করা, শিক্ষকদের নিয়মিত আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, নির্ধারিত সময়ে শ্রান্তি বিনোদন, উচ্চতর গ্রেড ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি বন্ধ করা।
মানববন্ধনে সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, আমদের ছাত্র ভাইয়েরা দেশকে বৈষম্যবিরোধী করা চেষ্টা করছেন। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষাকে বৈষম্যহীন করে গড়ে তুলতে চাই। আমরা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে এতদিন ধরা চলা প্রহসন বন্ধ চাই। শিক্ষকদের যেন ক্লাসের বাইরে আদমশুমারী, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা বা নির্বাচনের মত অন্য কোন কাজে মনযোগ না দিতে হয় তা নিশ্চিত করতে চাই।
সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইশরাত নাসিমা হাবীব বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শীর্ষ পদে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা বসে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য নানা জটিলতা সৃষ্টি করেন। তাই প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার গঠনের দাবি করছি। একইসঙ্গে জনবিচ্ছিন্ন ও গ্রহণযোগ্যতাবিহীন নতুন কারিকুলাম সংশোধনের দাবি জানাই।
মানববন্ধনে ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষক-শিক্ষা কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।