আসমানী এখন ভাইরাল
এতদিন যেন ভাঁজে মোড়ানো ছিল স্লোগান কন্যার হয়ে ওঠার গল্প। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে সম্প্রতি তা খুলল। প্রথম গল্পটা ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ সালের। ‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’ স্লোগানে হঠাৎই সেদিন ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাতি বনে গিয়েছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী ও ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী লাকী আক্তার। এরপর ৭ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। রাজনৈতিক উত্থান-পতন হয়েছে নানাভাবে, নানা রকমে। তবে স্লোগান কন্যা হওয়ার গল্পটি যেন সেই আগের মতই রয়ে গেছে।
ফ্রন্টলাইনে এবার ভাইরাল আসমানী আশা। সেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, সেই ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সম্প্রতি শাহবাগে শুরু হওয়া আন্দোলনে তার স্লোগান ইতোমধ্যেই সবার নজর কেড়েছে। জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আসমানী আশা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক তিনি। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। আশা জানান, রাজনীতির দীক্ষা পারিবারিকভাবেই পেয়েছেন তিনি। এগিয়ে যেতে চান আরো বহুদূর।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে আসমানী আশা বলেন, আমি ক্লাস সেভেন থেকে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত। আমি তখন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন গাইবান্দা জেলা শাখার সদস্য ছিলাম। পরে গাইবান্দা জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক হই। ঢাকা এসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া পর এখানে শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে আছি।
স্লোগান দেয়ার গল্প জানিয়ে আশা বলেন, আমি গাইবান্ধা গণজাগরণ মঞ্চ ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে স্লোগান দিয়েছি। এবারও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে স্লোগান দিচ্ছি। আশা জানান, শুধু তিনি নন, তার বাবা-মাও বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত। বাবা-মা দুজনেই বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির জেলা কমিটির সদস্য। এছাড়াও ছোট ভাই ছাত্র ইউনিয়নের করে।
ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর গত মঙ্গলবার পুলিশি হামলার শিকার হয়েছিলেন আশা। আঘাত পেয়েছেন পেটে-হাতে। তাতে দমে যাননি আশা। ব্যান্ডেজসহ ভাঙা হাত নিয়ে নিয়মিত আসছেন শাহবাগের আন্দোলনে। দিচ্ছেন ধর্ষণবিরোধী স্লোগান। আশার ক্ষোভ, ধর্ষণবিরোধী মিছিলে পুলিশ কেন আমাদের গায়ে হাত তুলবে, লাঠিচার্জ করবে? তিনি বলেন, আমার ওপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। এক পুরুষ পুলিশ সদস্য আমার গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছেন, পেটে ঘুষি মেরেছেন। আমরা তো ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি, পুলিশ কেন লাঠিচার্জ করছে- প্রশ্ন আশার।
আসমানী আশা মনে করেন, ধর্ষণের মূল কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতি। যার পেছনে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থা জড়িত। তার ভাষ্য, ধর্ষণের জন্য মানসিকতা জড়িত। নারীর পোশাক নয়। ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়া উচিত বলেও মনে করেন ছাত্র রাজনীতির এই কর্মী।