গণধর্ষণের আসামীরা ফেসবুকে সরব, খুঁজে পায় না পুলিশ
সিলেট এসসি কলেজের হোস্টেলে গণধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনার সংবাদ প্রচার প্রচারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ছবি ভাইরাল হয়। শনিবার সকালে এ ঘটনায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ খুঁজে না পেলেও ফেসবুকে সরব রয়েছে আসামীরা। শনিবার সকালেও এই মামলার দুই আসামী রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে। স্ট্যাটাসে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন।
গণধর্ষণের মামলার ৫ নম্বর আসামী রবিউল ইসলাম শনিবার সকাল ১১টার দিকে ফেসবুকে লেখেন, ‘‘সম্মানিত সচেতন নাগরিকবৃন্দ, আমি রবিউল হাসান। আমি এম সি কলেজের একজন শিক্ষার্থী। আপনারা অনেকেই চেনেন, আমি কেমন মানুষ তা হয়তো অনেকেই জানেন। গতকাল এম সি ছাত্রাবাসে গণধর্ষনের সাথে কে বা কারা আমাকে জড়িয়ে অনেক অনলাইন নিউজ করিয়েছেন। আমি এম সি কলেজ ছাত্র, কিন্তু আমি হোস্টেলে কখনই ছিলাম না, আমি বাসায় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ করছি, আমি যদি এই নির্মম গণধর্ষণের সাথে জড়িত নই। আমাদের পরিবার আছে। যদি আমি এই জঘন্য কাজের সাথে জড়িত থাকি; তা হলে প্রকাশে আমাকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়া হোক। আমি কোনোভাবেই এই কাজের সাথে জড়িত নই। সবার কাছে বিনীত অনুরোধ করছি সত্য না জেনে আমাকে এবং আমার প্রাণের সংগঠন ছাত্রলীগের নাম কোনো অপপ্রচার করবেন না। এমসি বিশ্ববিদ্যালের ছাত্রাবাসে গণধর্ষণকারী সকল নরপশুদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’’
এর আগে এই মামলার ৬ নম্বর আসামী মাহফুজুর রহমান মাসুম ফেসবুকে লেখেন, ‘‘এ রকম জঘন্য কাজের সাথে আমি জড়িত না। যদি জড়িত প্রমাণ পান; প্রকাশ্যে আমাকে মেরে ফেলবেন। একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস আছে। আল্লাহ আমাকে নির্দোষ প্রমান করবেন। তবে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আগে আমাকে সুইসাইডের দিকে নিয়ে যাওয়া আপনাদের বিচার আল্লাহ করবেন।’’ বাকি আসামীদের কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
সবুকে সরব থাকার পরও আসামীদের গ্রেপ্তার করতে না পারা প্রসঙ্গে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম চৌধুরী জানান, আমরা তাদের গ্রেপ্তারে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছি। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে।
এদিকে ধর্ষকদের বিচার চেয়ে শনিবার বিক্ষোভ শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস সংলগ্ন সিলেট-তামাবিল সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেলে স্বামীর সাথে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক তরুণী। সন্ধ্যায় তাদের কলেজ থেকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের ৫/৬ জন নেতাকর্মী। এরপর দুজনকে মারধর করে স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে তারা। রাতে ছাত্রাবাস থেকে এই দম্পত্তিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় শনিবার সকালে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২/৩ জনের বিরুদ্ধে শাহপরাণ থানায় মামলা করেন ধর্ষিতার স্বামী। মামলায় এজহারনামীয় আসামীরা হলেন, এম. সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেক আহমদ, অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
আসামীদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র। ধর্ষণের ঘটনার পর রাতভর ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। তবে আসামীদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।