ভারত-চীন দ্বন্দ্ব, সামরিক শক্তিতে কারা এগিয়ে?
লাদাখ সীমান্তে সোমবার রাতের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ভারতের অন্তত ২০ জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। চীনা বাহিনীরও কমপক্ষে ৪৩ জন হতাহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দু’পক্ষেই এখন ‘যুদ্ধ, যুদ্ধ’ রব। যেকোনও সময় শুরু হয়ে যেতে পারে আরও বড় সংঘর্ষ। কিন্তু দুই দেশ যদি সত্যিই যুদ্ধে জড়িয়ে যায়, তখন সামরিক শক্তির দিক থেকে কে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে? বিবিসির এই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মাহমুদ আলি বলেছেন—
“দুটি দেশেরই বিপুল অস্ত্রসম্ভার রয়েছে এবং এসব অস্ত্রশস্ত্র বেশ আধুনিক। গত ২০ বছর ধরে দুটি দেশ শুধু নিজেরাই সমরাস্ত্র তৈরি করেনি, একই সঙ্গে অস্ত্র আমদানিও করেছে। বিশেষ করে ভারত পরপর পাঁচ বছর বিশ্বের সবচাইতে বেশি অস্ত্র আমদানিকারক দেশের স্থান দখল করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইসরায়েল থেকে তারা অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র এনেছে। তারা নিজেরাও বিদেশি প্রযুক্তি এনে নিজেরা অস্ত্র তৈরি করেছে। একইভাবে চীন রাশিয়া থেকে কিছু অস্ত্র কিনেছে, কিন্তু বেশিরভাগ অস্ত্র তারা এখন নিজেরা উৎপাদন করে ।
কাজেই অত্যাধুনিক অস্ত্র দুপক্ষেরই আছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো গিরিসংকুল পার্বত্য এলাকায় তারা সেইসব অস্ত্র কতটা ব্যবহার করতে পারবে। বিমান বহর এবং ক্ষেপণাস্ত্র হয়তো তারা ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু যাকে আমরা সেনাবাহিনী বলি, যারা মাটিতে যুদ্ধ করে, তারা তাদের গোলন্দাজ, সাঁজোয়া বা ট্যাংক বহর খুব একটা ব্যবহার করতে পারবে বলে মনে হয় না।
গত কদিন ধরে গণমাধ্যমে, বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে দুই দেশের সামরিক শক্তির অনেক তুলনামূলক হিসেব দেয়া হচ্ছে। তিব্বত আর শিনজিয়াং অঞ্চলে চীনের কত যুদ্ধবিমান, কত সৈন্য আর ট্যাংক আছে, তার পাশাপাশি ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় যে কমান্ডগুলো রয়েছে, সেখানে কত সৈনিক আর সরঞ্জাম আছে।
কিন্তু এ ধরণের অংকের হিসেব আসলে একেবারেই সঠিক নয়। কেননা যার যত সৈন্যই থাকুক, নানা কারণে সব সৈন্য কোন দেশই মোতায়েন করতে পারে না। কারণ যেখানে এই যুদ্ধ হবে, সেখানকার ভূপ্রকৃতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, যে জায়গা নিয়ে বিরোধ, সেটা কোন দেশের কাছে কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটির জন্য তারা কতটুকু পর্যন্ত বলপ্রয়োগ করতে প্রস্তুত, সেটাই আসল প্রশ্ন।
কাজেই কোন সামরিক সংঘাতে এই প্রশ্নটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সামরিক শক্তির চেয়ে।”
আর সত্যিই যদি যুদ্ধ লেগে যায় চীন-ভারতের মধ্যে তবে কে জিতবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই মুহূর্তে সামরিক শক্তিতে কে কতটা এগিয়ে তা একনজরে দেখে নেয়া যাক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে সামরিক শক্তিতে চীন ও ভারতের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু হলো-
পিডব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং
সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরে, অর্থাৎ এ তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছে দেশটি। তবে ভারতও খুব একটা পিছিয়ে নেই। চীনের পরেই, অর্থাৎ চার নম্বরে রয়েছে তারা৷
সক্রিয় সেনাসদস্য
চীনের সেনাসদস্য রয়েছে মোট ২১ লাখ ২৩ হাজার, ভারতের ১৪ লাখ ৪৪ হাজার। তবে রিজার্ভ সৈন্যের সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের ৫ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা খাতের বাজেটে ভারতের চেয়ে কয়েকগুণ এগিয়ে চীন। চীনের ২ হাজার ৩৭০ কোটি ডলারের বিপরীতে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট মাত্র ৬১০ কোটি ডলার৷
এয়ারক্রাফট
এখানেও অনেকটাই এগিয়ে চীন। তাদের এয়ারক্রাফট রয়েছে ৩ হাজার ২১০টি। ভারতের রয়েছে ২ হাজার ১২৩টি।
যুদ্ধজাহাজ
চীনের যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ৭৭৭টি, ভারতের ২৮৫টি।
যুদ্ধবিমান
যুদ্ধবিমানের সংখ্যায় দ্বিগুণেরও বেশি এগিয়ে চীন। তাদের ১ হাজার ২৩২টি যুদ্ধবিমানের বিপরীতে ভারতের রয়েছে ৫৩৮টি৷
হেলিকপ্টার
চীনের হেলিকপ্টার ৯১১টি, ভারতের ৭২২টি৷
ট্যাংক
ট্যাংকের সংখ্যায় বেশ এগিয়ে ভারত। চীনের ট্যাংক রয়েছে ৩ হাজার ৫০০টি আর ভারতের ৪ হাজার ২৯২টি৷
সাঁজোয়া যান
চীনের সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ হাজার, ভারতের ৮ হাজার ৬৮৬টি৷
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
এখানে দুই দেশের মধ্যে তুলনাই চলে না। চীনের স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি রয়েছে ৩ হাজার ৮০০টি, ভারতের মাত্র ২৩৫টি৷
ফিল্ড আর্টিলারি
এখানে চীনের চেয়ে সামান্য এগিয়ে ভারত। চীনের ৩ হাজার ৮০০টির বিপরীতে ভারতের ফিল্ড আর্টিলারি
রয়েছে ৪ হাজার ৬০টি।
রকেট প্রজেক্টর
এখানেও যোজন যোজন এগিয়ে চীন। তাদের রকেট প্রজেক্টর ২ হাজার ৬৫০টি, ভারতের মোটে ২৬৬টি৷
সাবমেরিন
ভারতের চেয়ে চীনের সাবমেরিন প্রায় পাঁচগুণ বেশি। চীনের সাবমেরিন ৭৪টি, সেখানে ভারতের রয়েছে মাত্র ১৬টি।
বিমানবাহী জাহাজ
চীনের বিমানবাহী জাহাজ রয়েছে দু’টি, ভারতের একটি৷
ডেস্ট্রয়ার
চীনের ৩৬টি ডেস্ট্রয়ারের বিপরীতে ভারতের রয়েছে ১০টি৷
ফ্রিগেট
চীনের ৫২টি। তার ঠিক চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ১৩টি ফ্রিগেট ভারতের ৷
রণতরি
চীনের রণতরি ৫০টি, ভারতের ১৯টি৷
উপকূলীয় টহল
চীনের ২২০, ভারতের ১৩৯৷
বিমানবন্দর
চীনের মোট ৫০৭টি বিমানবন্দর রয়েছে, ভারতের ৩৪৭টি৷
নৌবন্দর ও টার্মিনাল
এখানেও এগিয়ে চীন। তাদের নৌবন্দর ও টার্মিনাল ২২টি। ভারতের রয়েছে মোট ১৩টি।
সূত্র: গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ডটকম, ডয়চে ভেলে, বিবিসি