২১ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৩৪

কানাডার জাতীয় নির্বাচনে লড়ছেন তিন বাংলাদেশি

কানাডার ৪৩তম জাতীয় নির্বাচনের (ফেডারেল নির্বাচন) ভোটগ্রহণ আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হবে । কানাডীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমনসের ৩৩৮টি আসনের জন্য লড়ছে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি, কনজারভেটিভ পার্টি অব কানাডা (সিপিসি), নিউ ডেমক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), গ্রিন পার্টি, ব্লক কুইবেকিজ-বিকিউ ও নবগঠিত পিপলস পার্টি অব কানাডা (পিপিসি)। এই ছয় দলের এক হাজার ৭৫৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী আছেন তিনজন। তাঁরা হলেন খালিশ আহমেদ, ফাইজ কামাল ও আফরোজা হোসেন।

গত সাধারণ নির্বাচনে (২০১৫) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একমাত্র প্রার্থী ছিলেন খালিশ আহমেদ। কানাডার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনিই প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে ইতিহাসে গড়েন। এনডিপির পক্ষে ক্যালগেরি সিগন্যাল হিল আসন থেকে অংশ নিয়ে খালিশ আহমেদ সেবার হেরে যান কনজারভেটিভ পার্টির রন লিপার্টের কাছে। এতে অবশ্য খালিশ আহমেদের ওপর আস্থা হারায়নি তাঁর দল। এবারও তাঁকে একই আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছে এনডিপি।

এনডিপি এবার আরেক বাংলাদেশি-কানাডিয়ান ফাইজ কামালকে নতুন করে মনোনয়ন দিয়েছে। অন্টারিওর স্কারবোরো সেন্টার আসনে লড়ছেন তিনি। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আফরোজা হোসেন। টরন্টো থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরের শহর অশোয়া থেকে লড়ছেন তিনি। লিবারেল পার্টি থেকে এই প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফেডারেল নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলেন।

এই তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত প্রকাশ হয়েছে নিজ নিজ পার্টির অফিশিয়াল সাইটসহ স্থানীয় বিভিন্ন মাধ্যমে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করা খালিশ আহমেদ পেশায় একজন ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি ব্যবসায়ী। বর্তমানে কানাডার এই খ্যাতিমান ভূতাত্ত্বিক প্রায় দুই যুগ ধরে নরওয়ে ও কানাডার ক্যালগেরির বিভিন্ন তেল ও গ্যাস কম্পানিতে জিও সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলেন স্বাধীন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। সমানভাবে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতেও।

এনডিপির আরেক প্রার্থী ফাইজ কামাল কানাডায় বাংলাদেশি অভিবাসী পরিবারের সন্তান। বিজনেস অপারেশন অ্যানালিস্ট হিসেবে ফাইজ কাজ করছেন বিখ্যাত তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইবিএমে। এর আগে তিনি বিখ্যাত ফ্যাশন পণ্যের ব্র্যান্ড এলজিএফজির হয়ে কাজ করেছেন এস্তোনিয়া, ফিলিপাইন, যুক্তারাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৮ সালের অন্টারিও প্রাদেশিক নির্বাচনে স্কারবোরো সাউথ-ওয়েস্ট থেকে বিজয়ী বাংলাদেশি এমপিপি (প্রাদেশিক এমপি) ডলি বেগমের নির্বাচনী প্রচারণাদলের সদস্য হিসেবে কাজ করেন তিনি। সে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কানাডিয়ান পার্লামেন্টে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপিপি হন ডলি বেগম। এবার ফেডারেল নির্বাচনে ফাইজ কামাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও লিবারেল পার্টির এমপি সালমা জাহিদ এবং কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী এরশাদ চৌধুরীর সঙ্গে।

লিবারেল পার্টির প্রার্থী আফরোজা হোসেন প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেনের সঙ্গে অভিবাসী হয়ে কানাডায় পাড়ি জমান। এর আগে তিনি পড়াশোনা করেন ঢাকার মোহাম্মদপুর গার্লস স্কুল ও পরে লালমাটিয়া মহিলা কলেজে। কানাডায় পাড়ি জমানোর পর তিনি ডারহাম কলেজ থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিপ্লোমা ও পরে অন্টারিওর বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে কমার্সে অনার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে একটি বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে আর্থিক ব্যবস্থাপক (ফিন্যানশিয়াল ম্যানেজার) হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি কানাডিয়ান সেনস সোসাইটি, হিউম্যান রাইটস, রিফিউজি পুনর্বাসনসহ অন্তত ১৩টি সংগঠনে স্বেচ্ছাশ্রম (ভলান্টিয়ার) দিচ্ছেন। ব্যক্তিজীবনে আফরোজা হোসেন একজন পেশাদার একাউন্ট্যান্ট।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই তিন প্রার্থীর জয় নিয়ে আশাবাদী স্থানীয় বাংলাদেশি অভিবাসীরা। কানাডার টরন্টোয় বসবাসরত সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলেন, কানাডার জাতীয় নির্বাচনে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল থেকে তিনজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর মনোনয়ন লাভ কানাডায় বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এতে প্রমাণিত হয়, কানাডার মূলধারার রাজনীতিকরা বাংলাদেশিদেরও গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন এবং তাঁদের নেতৃত্বের যোগ্যতাকে স্বীকার করে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, প্রবাসে সাধারণত বাংলাদেশিরা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এই তিনজন প্রার্থী এর ব্যতিক্রম ঘটালেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন প্রার্থীই বাংলাদেশে বড় হয়ে কানাডায় এসেছেন এবং কানাডার জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছেন।

সাগর বলেন, ‘এই প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের চেয়েও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন পাওয়াটাই সামগ্রিকভাবে কমিউনিটির জন্য উল্লেখযোগ্য অর্জন বলে আমরা মনে করি। আমরা তাঁদের সাফল্য কামনা করি, পাশাপাশি আরো বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি

মূলধারার রাজনীতিতে অংশ নিক—সেটা প্রত্যাশা করি।’