ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে জয়পুরহাটের ছাত্রনেতারা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৩০ PM , আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৩০ PM
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিপক্ষে মত দিয়েছে জয়পুরহাট জেলার সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলো।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিপক্ষে মতামত দিয়ে জয়পুরহাট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া রাজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয় তাদের পরিবার ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের খোঁজখবর নেওয়া খুব জরুরি। তোষামোদির জন্য যাকে তাঁকে নেতৃত্বে আনবেন আবার পড়ে দোষ ত্রুটি করলে দ্বায়ভার নিবেন না এটা হতে পারে না। এদের যারা নেতা বানিয়েছেন তাদের আগে ধরতে হবে।
তিনি আরো বলেন, যেখানে ছাত্র রাজনীতি থাকবে না, সেখান থেকে দেশ ও জাতি কিছু আশা করতে পারেনা। ছাত্রদের জীবনের বিনিময়ে আজকে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি। মনে রাখতে হবে ৫২’র কথা সে দিন যদি ছাত্ররা বুকের তাজা রক্ত না দিত তাহলে আমরা আজও পরাধীন থাকতাম। আবরার হত্যার সাথে যেই জড়িত থাক, তাদের শাস্তির দাবির সাথে সাথে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করার দাবি জানিয়েছে জেলা ছাত্রলীগের এই সভাপতি ।
“বুয়েট প্রশাসন নিজেদের সকল দায় এড়াতে এবং ছাত্রলীগের এই অপকর্ম ঢাকতে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন” এমন মন্তব্য করেছেন জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশেদ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা প্রগতিশীল ছাত্রজোট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্বশাসন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্মাণের কথা বলে আসছি। হলে হলে দখলদার ছাত্রলীগের গণরুম-গেস্টরুমে নির্যাতন, টর্চার সেলের কথা বলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা বন্ধের কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। উপরন্তু বুয়েটসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রশাসন ছাত্রলীগের দখলদারিত্বকেই পাকাপোক্ত করেছে। অতীতে সাবেকুন্নাহার সনি হত্যাকান্ডের সময়ও বুয়েট প্রশাসন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রাখার ভুমিকা আমরা দেখেছি।
তিনি আরো বলেন, বুয়েট পরিচালিত হয় ৬১'র অধ্যাদেশ দ্বারা যার মধ্যেই রয়েছে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের যা অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের ধারনার পরিপন্থী। গত সময়ে বুয়েটে কার্যত কোনো ছাত্র রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক কর্মকান্ডই ছিলো না, ছিলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও দখলদারির কর্মকান্ড। ফলে আবরার হত্যার ঘটনার পুরো দায় ছাত্র রাজনীতির উপর চাপিয়ে সরকার ও বুয়েট প্রশাসন ছাত্রলীগের প্রতি সাধারণ ছাত্রদের অসন্তোষকে আড়ালে নিতে চায়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের মধ্যে দিয়ে ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদের কারখানা তৈরী হবে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নয়, বরং ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাসী, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজী, মাস্তানি, ইত্যাদি অপকর্ম বন্ধ করতে হবে।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে সেখানে সন্ত্রাসের ও নোংড়া রাজনীতি বন্ধ করার কথা জানিয়েছেন জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের একাংশের আহ্বায়ক রেহেনা পারভিন খুশি। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি দরকার। তবে নোংরা রাজনীতি বাতিল আবশ্যক। কেউ রাজনীতির বাহিরে না। ছাত্ররাই পারে ভালো চিন্তার দারা সমাজকে পরির্বতন করতে। তাদের বুদ্ধিমত্তার দারা সকল অন্যায় কে পিছনে ফেলে ন্যায়ের পথ কে প্রসারিত করতে। এর জন্যই চাই সঠিক ছাত্র রাজনীতি ও তার পরিচালনা পদ্ধতি।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের মাধ্যমে সেখানে মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলা ছাত্র ইউনিয়নের আহ্বায়ক রিফাত আমিন রিয়ন। তিনি বলেন, বুয়েটে ছাত্র শিবির সহ সেখানে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে অনেক আগে থেকে। বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের মাধ্যমে সেখানে মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটতে পারে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করে, সেখানে সন্ত্রাস, টেন্ডার বাজি, টর্চার সেল, র্যাগিং সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এবং যদি কোন সংগঠন এইসব কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরে তাহলে তাদের রাজনীতি শুধু ক্যাম্পাসে বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সকল বিশ্ববিদ্যালয় সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে ভালো একটি শৃঙ্খলা পরিবেশ আনা সম্ভব। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ক্যাম্পাস নিয়ে আর প্রশাসনকে আর চিন্তা করতে হবে না। ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ক্যাম্পাস সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে ছাত্র ইউনিয়নের এই আহ্বায়ক।
উলেখ্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ কে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ ১৫জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ হত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেছে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।