অবশেষে বুয়েট ছাত্র হত্যায় অভিযুক্ত অমিত সাহা আটক

  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত অমিত সাহাকে আটক করা হয়েছে। আজ তাকে আটক করা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। অমিত সাহা বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রাথমিকভাবে তার সম্পৃক্তার প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।

আবরার হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেন বাবা বরকতউল্লাহ। এর মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে ফাহাদ খুন হওয়া ২০১১ নম্বর কক্ষের বাসিন্দা শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহার নাম না থাকা নিয়ে চলছে বিতর্ক।

অমিত সাহারই একটি ফেসবুক মেসেজ নিয়েও শুরু হয় চলছে বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেটি ভাইরাল হয়েছে। জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের আগে ফাহাদের সহপাঠী ১৭তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে অমিত সাহা ফেসবুক মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করেন, আবরার ফাহাদ কি হলে আছে?

আবরার হত্যা মামলার এজহার থেকে রহস্যজনকভাবে অমিত সাহার নাম বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ ছিলেন অনেকেই। তার নাম কেন মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানেননা বলে জানিয়েছিলেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র সাথে আলাপকালে বরকত উল্লাহ বলেন, ‘আমি যখন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে চকবাজার থানায় মামলা করতে যাই, তখন পুলিশের হাতে কয়েকজনের নাম এবং শিক্ষার্থীদের হাতে কয়েকজনের নাম ছিল। মামলার এজহারে কার নাম ছিল আর কাম ছিল না তা আমি জানিনা। আমি শুধু সই করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলেকে যে রুমে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে সেই রুমে কে কে থাকে আমি সেটাও জানতাম না। আমি এদের কাইকে চিনি না, আর আমাকে কেউ বলেও নাই। মামলা করার পর কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারি।’

নিহত আবরারের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের সবার বিচার চাই। এসময় তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আপনারা একটু দেখবেন যেন মামলা থেকে কেউ বাদ না যায়।’

এদিকে আবরার হত্যার পর বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, আবরারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল এবং উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা।

শেরেবাংলা হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ‘আবরারকে যে রুমে পেটানো হয় সেখানে চার শিক্ষার্থী থাকেন। তাঁরা হলেন— বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা, উপদপ্তর সম্পাদক ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র মুজতাবা রাফিদ, সমাজসেবা বিষয়ক উপসম্পাদক ও বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ইফতি মোশারফ ৷ আরেকজন চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী, যিনি দুর্গাপূজার ছুটিতে দুই দিন আগে গ্রামের বাড়িতে গেছেন ৷

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সাম্প্রতিক চুক্তি নিয়ে রোববার স্ট্যাটাস দেন আবরার। ওইদিন রাত ৮টার দিকে আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে শেরেবাংলা হলের টর্চার সেল নামে পরিচিত ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে শেরেবাংলা হলের একতলা ও দ্বিতীয় তলার মাঝামাঝি জায়গায় আবরারকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।


সর্বশেষ সংবাদ