০৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:৫৩

বাসায় নিঃসঙ্গ থাকছেন শোভন-রাব্বানী

  © সংগৃহীত

ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানোর পর নিঃসঙ্গ সময় পার করছেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি ঘিরে হাজারও নেতাকর্মীর সেই ভিড় ও মোটরসাইকেলের বহর আর নেই। ঘনিষ্ঠ হিসেবে যাদের পদ দিয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই এড়িয়ে চলছেন। গণভবনে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় বিদেশ সফরের আগে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানানোরও সুযোগ হয়নি। ফলে বাসাতেই অধিকাংশ সময় পার করছেন শোভন-রাব্বানী। ছাত্রলীগের সাবেক এই দুই শীর্ষ নেতার ঘনিষ্ঠজনদের সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

শোভন-রাব্বানীর ঘনিষ্ঠরা বলেন, শীর্ষ নেতাদের পদ হারানোর খবর শুনে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। নতুন নেতাকে বরণ এবং পুরনো নেতাকে বিদায় জানানো- এই দুটি বিষয় নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন অনেকেই। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তারা বলেন, কে কার লোক সেই হিসেবে নয়- যোগ্যতা অনুযায়ী ছাত্রলীগের সব পর্যায়ের নেতৃত্ব ঠিক করা হবে। এ সময় অনেক নেতাকর্মীকেই কাঁদতে দেখা গেছে। বিপরীত চিত্র ছিল নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের ঘনিষ্ঠজন ও পদবঞ্চিত অর্ধশত নেতার মধ্যে। তারা শোভন-রাব্বানীর অপসারণে টিএসসিতে উল্লাস করেন।

এদিকে পদ হারানোর খবর শুনে রাতে হাতিরপুল ভূতের গলির বাসায় ফিরে যান শোভন। সেখানে তার ঘনিষ্ঠরা আগে থেকেই ছিল। তাদের সঙ্গে রাত তিনটা পর্যন্ত সময় কাটান তিনি। এদিকে রাব্বানী ফিরে যান হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার বাসায়। সেখানে তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নেতাকর্মীদের অনেকে। এ সময় রাব্বানীও অঝোরে কাঁদছিলেন। পরে গভীর রাতে নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সবাইকে বিদায় দেন রাব্বানী।

ছাত্রলীগের নেতারা জানান, নতুন নেতৃত্ব আসার পর শোভন-রাব্বানীর পুরনো দিনের ঘনিষ্ঠজনদের অনেকেই এখন তাদের এড়িয়ে চলছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্য সমালোচনা করছেন শোভন-রাব্বানীর। শীর্ষ নেতৃত্বের ব্যক্তিগত ভুলের কারণেই এ অবস্থা হয়েছে বলেও মত দেন তারা। সম্প্রতি রাব্বানীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রেজার একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ও সেখানে গোলাম রাব্বানীর কমেন্ট খুব আলোচিত হয়।

শোভন-রাব্বানীর ঘনিষ্ঠরা জানান, জয়-লেখক দায়িত্ব গ্রহণের পর তাদের ‘কাছের মানুষ’ হওয়ার চেষ্টা ছিল সাবেক শীর্ষ নেতৃত্বের আস্থাভাজনদের বড় একটি অংশের। ফলে শোভন-রাব্বানীর বাসার নিচে নেতাকর্মীদের সেই পুরনো ভিড় শেষ হয়ে যায়। অনেকটা একা সময় পার করতে থাকেন সাবেক শীর্ষ নেতারা। তবে জয়-লেখকের কাছে গিয়ে যারা ‘সুবিধা’ করতে পারেনি তাদের একটি অংশ এখন আবার শোভন-রাব্বানীর কাছে ফিরেছেন।

ছাত্রলীগ নেতারা জানান, মাঝেমধ্যে ‘খুব কাছের’ কিছু মানুষকে নিয়ে বের হন। এর মধ্যে সম্মেলনের আগে যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তাদের অনেকের সঙ্গে ফের যোগাযোগ শুরু করেছেন শোভন। তবে আগের মতো সেসব জায়গা থেকে সারা পাচ্ছেন না। এদিকে রাব্বানীও সাবেক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন মাঝে মাঝে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ খোকনের স্মরণসভায় মধুর ক্যান্টিনে এসেছিলেন তিনি। তবে পদ হারিয়ে প্রথমবারের মতো কোনো অনুষ্ঠানে এসেও পদবঞ্চিতদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। ছাত্রলীগের সাবেক এই দুই নেতা গণমাধ্যমকেও অনেকটা এড়িয়ে চলছেন। ফলে তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় যোগাযোগর চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ হয়। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেন। এই কমিটির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। ফলে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১০ মাস আগেই তাদর পদ হারাতে হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাদের ‘বাধ্যতামূলক পদত্যাগ’র মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। ছাত্রলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে।