২৭ বছর পর ছাত্রদলে সরাসরি নির্বাচন, ফরম বিতরন শুরু আজ
বিএনপির সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া অবশেষে দৃশ্যমান হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আজ শনিবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন আগামী ৩১ আগস্ট।
২৭ বছর পর আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এর মাধ্যমে দুই যুগেরও বেশি সময়ের ‘প্রেস রিলিজ কমিটি’, ‘পকেট কমিটি’, ‘সিণ্ডিকেটের কমিটি’, ‘অমুক ভাইয়ের কমিটি’র মত তকমা ঘুচতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন পর অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে দলটি।
ছাত্রদলের কয়েকজন সাবেক নেতা জানান, গত আড়াই দশকে ছাত্রদলের প্রতিটি কমিটি ঘোষনার পরেই বিশেষ প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে পকেট কমিটি হয়েছে বলে অভিযোগ করে দলের বঞ্চিত অংশ বিদ্রোহ করে। কমিটি গঠনে মাঠের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ না থাকায় ছাত্রদলের নেতৃত্ব বিকাশের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এক গ্রুপ থেকে অন্য গ্রুপে গেছে মূল নেতৃত্ব। কিন্তু সাংগঠনিক বিকাশ আর হয়নি।
১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ছাত্রদল। সর্বশেষ ১৯৯২ সালের পঞ্চম কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে রুহুল কবির রিজভী ও এম ইলিয়াস আলী যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর পরের সবগুলো কমিটিই সিণ্ডিকেট প্রভাবিত ‘পকেট কমিটি’ বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮০ সালে ছাত্রদলের প্রথম কাউন্সিলে এনামুল কবির শহীদ সভাপতি ও গোলাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় কাউন্সিলে গোলাম সারোয়ার মিলন সভাপতি ও আবুল কাশেম চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮৩ সালে আবুল কাশেম চৌধুরী সভাপতি ও জালাল আহমেদ সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৬ সালে জালাল আহমেদ সভাপতি ও মাহবুবুল হক বাবলু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দীর্ঘদিন ধরে মূল দল বিএনপি ক্ষমতায় না থাকায় পাইপলাইনে তরুণ নেতাকর্মীদের সংখ্যা কমে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগের সুযোগও হ্রাস পেয়েছে। সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্রার্থীরা বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় পরিসরে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপি যতটা এগিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল ততটা পিছিয়ে। এর প্রধান কারণ দুইটি। এক. যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব বাদ দিয়ে সিণ্ডিকেটের অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ ব্যক্তিকে দিয়ে নেতৃ্ত্ব তৈরি। দুই. অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সের নেতারা বর্তমানের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহজে মেলামেশা করতে পারেন না। নিয়মিত ছাত্রছাত্রীরাও তাদের সঙ্গে মেশতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তিন. সেশনজট কমে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দ্রুত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের রাজনীতি করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বা পেশাজীবি ক্যারিয়ার গড়া কঠিন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতা জানান, দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব ছাত্রদলের দুর্বলতা ও নেতিবাচক প্রবণতাগুলো বুঝতে পেরেছেন। তাই নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে গত ১৫ জুলাই ভোটের তারিখ নির্ধারন করা হয়েছিল। শর্ত অনুযায়ী, ২০০০ সালের আগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন এমন কেউ ছাত্রদলের কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু বয়সসীমা নিয়ে সংগঠনের একটি অংশ বিদ্রোহ করে। তাদের আন্দোলনে কাউন্সিল পিছিয়ে যায়। বিদ্রোহে জড়িত ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।
সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিক্ষুব্ধ নেতাদের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। ওই আলোচনার পর পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়। নতুন তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বিতরণ ১৭-১৮ আগস্ট, জমা ১৯-২০ আগস্ট। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩১ আগস্ট। ২২-২৬ আগস্ট যাচাই-বাছাই শেষে ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটের জন্য প্রচার চালাতে পারবেন।
এ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি এবং শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটগ্রহণ হবে।
এদিকে নতুন নেতৃত্বে আসার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নেতারা জেলায় জেলায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। শুধু ভোটারই নয়, সংশ্লিষ্ট জেলা-মহানগর এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন তারা। এর মাধ্যমে ছাত্রদলের তৃণমূলেও নতুন উদ্যম তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন পদপ্রত্যাশীরা।