১১ জুন ২০১৯, ১২:১৮

আশ্বাস নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ চান ছাত্রদলের নেতারা (ভিডিও)

  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপি নেতারা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তারা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন তারা। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরতরা।

আন্দোলনের একপর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যান দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান। এসময় সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব সমস্যার সমাধান করে ছাত্রদলকে আগের মতোই গতিশীল করা হবে। তবে সমস্যার সমাধানে সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।’ এসময় তিনি গুলশানে কিংবা নয়া পল্টনে ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে বসার প্রস্তাব দেন।

তবে তার আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরেননি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসলেও তাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ছাত্রদলের নতুন কমিটি করার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা মানা যায় না। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ১২টি ইউনিটের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হবেন।

এর আগে নয়া পল্টনে গিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদল নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন দলটির কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এমনকি সেখানে ধাক্কা-ধাক্কির ঘটনাও ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এসময় সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করার আশ্বাস দেন।

অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাদের নিয়ে ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় আজ থেকে আন্দোলন শুরু করেছেন ‘বঞ্চিত’ নেতাকর্মীরা। দুপুরে নয়া পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনশনেও বসেছেন তারা। এছাড়া কার্যালয়ে তালা লাগালেও তা পরে খুলে দেন ছাত্রদলের ‘বঞ্চিত’ নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলেও তাদেরকে বাঁধা দেওয়া হয়েছে।

এর একপর্যায়ে সেখানে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। এসময় তারা ভুয়া, ভুয়া বলে স্লোগান দেন। এছাড়া তাদের দাবি অনুযায়ী কমিটি গঠনের দাবি জানান। তারা স্লোগান দেন, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুশিয়ার, সাবধান’, ‘দালালি আর করিস না, পিঠের চামড়া থাকবে না’, ‘আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দাও, দিতে হবে’। এছাড়া বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী এবং শামসুজ্জামান দুদু’র বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন তারা। 

জানা গেছে, পার্টি অফিসের ভেতরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সদ্য বিদায়ী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এ কর্মসূচিতে উপস্থিত রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সেখানে অবস্থান করে ছাত্রদল নেতারা তাদের দাবি জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির এজমল হোসেন পাইলট দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় বিএনপির অনেকে সরকারের এজেন্টে পরিণত হয়েছে, তাদের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের সন্দেহ রয়েছে। তাই আমরা ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে কথা বলার জন্য পার্টি অফিসে যাচ্ছি। আমাদের কোন কর্মসূচি নাই, শান্তিপূর্ণভাবেই আমরা যাব। আমাদের পরবর্তী মুভমেন্ট কেমন হবে তা পরিস্থিতি বিবেচনা করবে।’

সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী যে প্রেস রিলিজ দিয়েছে তা আমরা মানি না। তার কি রাইট আছে এটা দেয়ার? আমরা চাই এখন থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত একটা কমিটি হোক, আর জানুয়ারি থেকে আরেকটা কমিটি। তাহলে সিনিয়ররাও স্থান পাবে জুনিয়ররাও প্রশিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাবে।’

গত ৩ জুন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করে বিএনপি। একইসাথে ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে বলে জানানো হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রার্থী হতে হলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। এছাড়া কেবলমাত্র ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যেকোন বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের কাউন্সিলের তফসিল পরবর্তীতে জানানো হবে বলে রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরে ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে তিনটি কমিটি গঠন করে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন পরিচালনা, বাছাই ও আপিল কমিটির কথা জানানো হয়। 

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রাজিব আহসান। 

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে বাছাই কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশিদ হাবিব ও আকরামুল হাসান। 

আর আপিল কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ড. আসাদুজ্জমান রিপন, আমান উল্লাহ আমান।