০৯ জুন ২০১৯, ১৩:১৫

প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মীদের রক্তক্ষরণ করানো যায়, সরকার পতন হয় না

  © ফাইল ফটো

ঈদের আগে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন সিনিয়র নেতারা। এ নিয়ে শিগগিরই তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্নভাবে নিজেদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন তারা। এমনকি তাদেরকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগটাও দেয়া হলো না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছাত্রদল নেতা এজমল হোসেন পাইলট। তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘মন আমার ফড়িং হয়ে পদ্মপাতায় বসে। গতকাল সন্ধ্যার পর। অনেকগুলো আপন মুখ একসাথে আড্ডায় বসেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে। ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে। কিন্তু কারোর মুখেই ঈদ ঈদ ভাব ছিলো না! নেত্রী ঈদ করেন বন্দী হয়ে, তো আমাদের আবার ঈদ কিসের?

আর মরার উপর উদ্দাম নৃত্য-ঈদের আগের রাতে সবাই সাবেক! বিষন্ন মনে সবাই বসেছিলাম। সদ্য সাবেক কর্মী সব!উপস্থিত সবাই ঘর ছাড়া-বাড়ি ছাড়া-অসংখ্য মামলার আসামী-বার কয়েক কারা ভোগকারী! সবারই একটা উজ্জ্বল রাজনৈতিক অতীত রয়েছে। কিন্তু কারোরই রাজনৈতিক উজ্জ্বল ভবিষ্যত নেই! ধীরে ধীরে কুপি বাতির মতো তেল ফুরিয়ে রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটবে!

সদ্য সাবেক হওয়া একটি সংগঠনের পাঁচ বছরে মূলত রাজনৈতিক বেনিফেসিয়ারি মাত্র তিন জন! পাঁচ বছরে মাত্র তিন জনের রাজনৈতিক নিশ্চয়তা দিয়েছে দল! বলা যায় তিন জনই কামিয়াব! তিন জন ছাড়া বাকীরা সব রাস্তায় রাস্তায় ‘পদ ভিক্ষা’ চাইতে হবে! জীবনটা ছাড়া বাকী সব সংগঠনকে দিয়ে পদ ভিক্ষা করাই এদের নিয়তি এখন! এই সব সৃষ্টার গায়ে সহ্য হবে না।

জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে- পদ থাকলে পদ একদিন সাবেক হয়- এটা শতসিদ্ধ সত্য। কিন্তু যারা একটি খেলায় অংশগ্রহন করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করলো, তাদেরকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার সুযোগটাও দেয়া হলো না- সবার ক্ষোভের বা বেদনার জায়গাটা এখানেই!

এখন কথা হলো, আড়াই বছর বা পৌনে তিন বছর হতে চললো যে সংগঠনগুলো এখনও পূর্ণাঙ্গ করতে পারলো না- সেই সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব কি ব্যর্থ না সফল? পাঁচ জন বা সাত জনেই একটা পূর্ণ মেয়াদ পার করে দেবে? মেয়াদোর্ত্তীণ হিসাবে ঐ কমিটির বিলুপ্তির 'প্রেস বিজ্ঞপ্তি' দেখতে কারোরই খারাপ লাগবে না! নাকি-ঐ সব কমিটি ভাংতে সাহসে কুলোয় না?

ছাত্র সংগঠন থেকে ব্যর্থতার তকমা নিয়ে যারা কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নেন, তিনাদেরকেই কেন আবার অন্য সংগঠনের শীর্ষ পদে দায়িত্ব দিতে হয়? ‘নেতৃত্বের বনসাই’ তৈরী করলে নেতৃত্বের বিকাশ সম্ভব হয় না! এক সংগঠনে যে ব্যর্থ অন্য সংগঠনে সে সফল নেতৃত্ব দিতে পারে না!

কথা তো আরো আছে- সম্পূর্ন নিস্ক্রিয় নির্বাহী কমিটির সভ্যদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হওয়া কেন? ছোটবেলায় বর্ষাকালে বাড়ির সামনে নদীতে নৌকা চালাতাম। নদীতে তখন স্রোত থাকতো। আমরা বলতাম ‘ঢল’ নামছে। তো স্রোতের বিপরীতে নৌকাটা চালিয়ে নিয়ে আসা কঠিন।

‘প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে কমিটি বিলুপ্ত করে ঈদের আগের রাতে হাজারো ত্যাগী কর্মীর বুকে রক্ত ক্ষরণ করানো যায়, প্রেস কনফারেন্স করে টানা তিনবারের একটি সরকারকে মসনদ থেকে রাস্তায় নামানো যায় না!’

এজমল হোসেন পাইলটের ফেসবুক স্ট্যাটাস

উল্লেখ্য গত সোমবার (৩ জুন) রাতে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করে বিএনপি। একইসাথে ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে বলেও জানিয়েছে দলটি। গণমাধ্যমে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রার্থী হতে হলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে। এছাড়া কেবলমাত্র ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যেকোন বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের কাউন্সিলের তফসিল পরবর্তীতে জানানো হবে বলে রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।