০১ জুন ২০১৯, ১৫:০৭

‘১৯’ আতঙ্কে ছাত্রলীগ!

গাণিতিক ‘১৯’ সংখ্যার ঘোর কাটছে না ছাত্রলীগে। আতঙ্ক বিরাজ করছে পদপ্রাপ্ত নেতাদের মাঝে। আর পদবঞ্চিতরা এই তালিকা প্রকাশের দাবি করে আসলেও সভাপতি-সম্পাদক বলছেন ‘পারিবারিক-সামাজিক’ হেয় করার বিষয় থাকায় তা প্রকাশ করা হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশে আসলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান গোলাম রাব্বানী। ফলে দুই বছর মেয়াদী কমিটির ১১ মাস পর ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও তা নিয়ে চলছে নিয়ে তুমুল বিতর্কে।

এদিকে কমিটি গঠনের পর ১৫ মে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সংগঠনটির নতুন কমিটির শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। তখন অপরাধী ও বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দিতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ সেই নির্দেশনা পালন না করে ২৭ মে মধ্যরাতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। ফলে ২৬ মে দিবাগত রাত ১টা থেকে ফের আন্দোলনে নামেন পদবঞ্চিতরা। শনিবার টানা সপ্তম দিনের মধ্যে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন তারা। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের পদায়ন না করা পর্যন্ত তারা এ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। ১৯টি শূন্য পদের নাম প্রকাশের দাবিও রয়েছে তাদের। দাবি না মানলে তারা বাড়ি যাবেন না, ঢাকায়ই ঈদ করবেন।

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, যেসব পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে তাদেরকে কিন্তু সংগঠন থেকে অব্যাহতিও দেয়া হয়নি বহিষ্কারও করা হয়নি। যেহেতু অভিযোগ এসেছে তাই ১৯টি পদ শুধু শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই ১৯ জনের বিষয়ে আমরা কিছু জায়গায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। যেমন, এদের একজন বিয়ে করেছে কিন্তু বউ মারা গেছে। আরেকটা মেয়ের ডিভোর্স হয়েছে তিন বছর আগে। আরেকজন তিন বছর আগে চাকরি করত। আমরা এদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না বলে আমাদের একমাত্র অভিভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি দেশে ফিরলে তার সঙ্গে কথা বলে শূন্যপদের নাম ঘোষণা করা হবে।

গত ২৮ মে দিবাগত রাত ১টায় এই ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এর আগে গত ১৩ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয়। ৩০১ সদস্যের এ কমিটির শতাধিক নেতার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে পদ পাওয়া এবং বিভিন্ন অন্যায়, অপকর্ম ও অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। নতুন কমিটির সদস্যদের মধ্যে হত্যা মামলার আসামি থেকে শুরু করে বিবাহিত, বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতা, মাদক গ্রহণ ও ব্যবসা, চাকরিজীবীর নাম রয়েছে। অন্যদিকে এই কমিটিতে জায়গা হয়নি সর্বশেষ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা প্রায় অর্ধশত নেতার। এতে ক্ষোভ জানিয়ে কমিটি প্রত্যাখ্যান করলে তাদের ওপর দু’দফায় হামলা করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা।

১৫ মে চাপের মুখে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৭ জন বিতর্কিত নেতার একটি তালিকা প্রকাশ করেন। তাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তথ্য-প্রমাণসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পদগুলো শূন্য হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর ১৬ মে বিভিন্ন অপরাধ অপকর্মে জড়িত এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও রেওয়াজ পরিপন্থী উপায়ে পদপ্রাপ্ত বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেন পদবঞ্চিতরা। সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব ও পদবঞ্চিতদের এমন মুখোমুখি অবস্থানের ফলে আওয়ামী লীগের ৪ সিনিয়র নেতার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৭টি পদ শূন্য ঘোষণা করেনি।

গত কমিটির কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, অভিযুক্ত শতাধিক নেতার নাম আমরা বলেছি। তাদের মধ্যে অকাট্য দলিলসহ ৫০ জনের তালিকা দিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে অসংখ্যবার যোগাযোগ করেও পাইনি। পরে নানক ভাইকে (জাহাঙ্গীর কবির নানক) দিয়েছি। অথচ নতুন নাটক সাজিয়ে ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করে একটি প্রেস রিলিজ দেয়া হয়েছে। যা একেবারেই অস্পষ্ট। সেখানে কারও নাম নেই, কোনো কিছু সুস্পষ্টভাবে বলা হয়নি। আমরা এই ছল-চাতুরীর প্রতিবাদ জানাই। ১৯টি শূন্যপদের নাম ঘোষণা করতে আমরা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলাম। তা-ও মানা হয়নি। এভাবে সংগঠন চলতে পারে না। আমাদের দাবি, সব বিতর্কিতকে সংগঠন থেকে বাদ দিতে হবে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তা না করা পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চলবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলেছেন, এই ১৯টি শূন্যপদের নাম ঘোষণা করা উচিত। কারণ তারা পদ পেয়েও এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তৃণমূলে সেভাবে কাজ করতে পারছেন না। অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন, ‘ভাই, উনিশ জনের মধ্যে আছেন নাকি?।’ তারা বলছেন, সামনে ঈদ। পদপ্রাপ্তদের প্রায় সবাই গ্রামের বাড়িতে যাবেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। অথচ পদ নিয়ে ধোঁয়াশা অবস্থার কারণে তারা কর্মসূচি সাজাতে পারছেন না। তাই ঈদের আগেই শূন্যপদের বিষয়টি স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন তারা।