২৯ মে ২০১৯, ১৬:৩৯

রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, তখন সবকিছু গোলমেলে হয়ে যায়

  © টিডিসি ফটো

ছাত্রলীগ নিয়ে বিতর্ক যেন কাটছেই না। মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়া বিতর্কিত ১৯ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং ওই ১৯টি পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতারা এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও পেয়েছেন অপরাজনীতির আভাস।তারা বলছেন কোন ১৯টি পদ শূন্য করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে তা স্পষ্ট করা হয়নি। কমিটির বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কমিটির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী তাদের যে সিদ্ধান্ত দেবেন তা তারা মাথা পেতে নেবেন বলেও জানান। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থানকারী পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতারা সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে তারা তিন পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পেশ করেন শোনান। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তারা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশের সাধারণ মানুষের যে কোন প্রয়োজনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল আছে এবং থাকবে। প্রত্যেকটি মেধাবী, মুক্তবুদ্ধি ও স্বাধীনতা স্বপক্ষের অধিকারী ছাত্রের প্রথম পছন্দ ছাত্রলীগ।

তারা আরও বলেন, ২৯ তম জাতীয় সম্মেলনের দীর্ঘ একবছর পর ১৩মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে। পদ পাওয়া ৩০১ জনের একটা বড় অংশ বিতর্কিত এবং যাদের গঠনতন্ত্র কিংবা নৈতিকভাবে পদ পাওয়ার যোগ্যতা নেই। বিগত সময় গুলোতে যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ দিয়ে বিএনপি জামায়াত পরিবারের সদস্য, চাকরিজীবী, বিবাহিত, বিভিন্ন মামলার আসামী, মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী এবং নানান অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদ দেয়া হয়েছে।

চরম অনিয়ম ও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের কমিটি নিয়ে আমরা আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছি।প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ছাত্রলীগের অনেকে অত্যাচার নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। একের পর এক হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে বিছানায় যন্ত্রণাময় দিন পার করেছেন।রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে যায় তখন সবকিছু গোলমেলে হয়ে যায়। আজকে কয়টা দিন ধরে প্রচণ্ড রোদে এই রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য কোন সমাধান আসেনি।

পদবঞ্চিত নেতারা অভিযোগ করে বলেন, কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রায় শ খানেক বিতর্কিত নেতাদের নাম প্রকাশ করা হলেও সরানো হয়েছে মাত্র ১৯ জনকে। এ নিয়েও আছে নানা বিভ্রান্তি। ১৯ টি পদ শূন্য হয়েছে কিন্তু কোন ১৯ টি পদ? বা সেই ১৯ টি পদে কারা ছিল? যে ১৯ টি পদ শূন্য ঘোষণা করা হলো তা একেবারেই অস্পষ্ট এবং ভ্রান্ত একটি ধারনা মাত্র। বাস্তবে এর কোন কার্যকারিতা নেই। কারণ ১৯ টি পদ শূন্য হলেও এখনো যে যার পদে বহাল তবিয়তে আছেন। এটাকে শুভঙ্করের ফাঁকি বললেও ভুল বলা হবেনা। এটা সুপরিকল্পিত রাজনীতি নয় অপরাজনীতি, এগুলো অনেক হয়েছে, অনেক সহ্য করেছি। এখন সময় এসেছে বলার।

জলঘোলা করে মৎস শিকার থেকে বিরত থাকুন। অবিলম্বে শূন্য হওয়া ১৯ জনের নাম ও পদের বিষয়টি স্পষ্ট করুন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আদর্শিক রাজনীতি চর্চার পাঠশালা এখানে কোন অপরাজনিতীর জায়গা নেই। অধিক তদন্তের মাধ্যমে বাকি বিতর্কিতদের অবিলম্বে সংগঠন থেকে দ্রুত বহিষ্কার করুন। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট বিতর্কিতদের সরিয়ে ছাত্রলীগের প্রকৃত ত্যাগী কর্মীদের পদায়ন করে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিন। এটা সংগঠনের জন্য মঙ্গলজনক।

সাংবাদিকদের তাদের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তারা বলেন, আপনাদের মাধ্যমে ছাত্রলীগের একমাত্র অভিভাবক, আমদের আস্থা, বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাত কামনা করছি। আমাদের একটি সুলিখিত গঠনতন্ত্র রয়েছে তবুও আমরা বিশ্বাস করি ছাত্রলীগের ব্যপারে বঙ্গবন্ধু কন্যার যে কোন কথাই আমাদের শিরোধার্য। তিনিই আমাদের সর্বোচ্চ গঠনতন্ত্র। রাজপথে আমরা অনেক ঘাম ঝড়িয়েছি, অনেক শ্রম দিয়েছি, উনি আমাদের যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমরা বিনা বাক্যে তা মাথা পেতে নিবো ।