আসন সমঝোতায় জামায়াত-এনসিপি, সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহেই
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলো সংসদে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের জন্য জোট কিংবা আসন সমঝোতার মাধ্যমে কৌশলে প্রার্থী দাড় করানোর চেষ্টা করছে। বিশেষ করে, বড় দলগুলো নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী ও পাকাপোক্ত করার জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট ও নতুন দলগুলোকে কাছে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এরই প্রেক্ষিতে, গত কয়েকদিনের মধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদের মতো দুই দলকে নিজেদের জোটে নিয়েছে বিএনপি। একইভাবে, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ কয়েকটি দলকে কাছে পেতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ লক্ষ্যে দল দুটির মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট, আসন সমঝোতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে, আগামী দুএকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারে তারা।
“জামায়াতের সঙ্গে হওয়া আলোচনার বিষয়ে আমরা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এখনো পৌঁছতে পারিনি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।” - আখতার হোসেন, সদস্য সচিব, এনসিপি।
দল দুটির একাধিক সূত্র দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছে, গত বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের বাসায় দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে যাওয়া একটি প্রতিনিধি দল। দুই দলের নেতাদের মধ্যে নির্বাচনী জোট নিয়ে আলোচনা হলেও আসন সমঝোতা, মৌলিক সংস্কার, আওয়ামী লীগের অপরাধীদের বিচারসহ মৌলিক কিছু বিষয়ের আলোচনা বেশি প্রাধান্য পেয়েছে এবং তারা ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।
“আমাদের শরীক ৮ দলের বাইরেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এনসিপির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।” - এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
সূত্র বলছে, এনসিপি জামায়াতের কাছে ৫০ বা তারও বেশি আসন চেয়েছে। কিন্তু জামায়াত এনসিপির জন্য ৩০ টি আসন দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে সম্মতি জানিয়েছে। যদিও দুই দলের সমঝোতা অনুযায়ী শেষ-মেষ ৩০ থেকে ৫০ টি আসনে সীমাবদ্ধ হতে পারে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এনসিপির নেতৃত্বে জোটভুক্ত দুই দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনও জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
এর আগে, বিএনপির সঙ্গে এনসিপির জোটের আলোচনা ব্যর্থ হয়। বিএনপি শুরুতে ৩০টি আসন ছাড়ার কথা বললেও শেষ পর্যায়ে এসে চারটি দিতে চাওয়ায় ভেস্তে যায় সে আলোচনা। পরে চলতি মাসের শুরুতে এনসিপি, এবি পার্টি এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠন করে।
এরপর তারা আবার রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে। জামায়াতও তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপিকে টেক্কা দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন দলকে জোটভুক্ত করার অংশ হিসেবে নির্বাচনের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সব সহযোগিতা দিয়ে হলেও এনসিপিকে পাশে চায় বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যদি আসন সমঝোতা হয়ে যায়, তাহলে জামায়াত এনসিপির প্রার্থীদের প্রত্যেককে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যয়ের জন্য মোটা অংকের অর্থ দিতে পারে পারে। কেউ কেউ বলছেন, এ অর্থের পরিমাণ দেড় কোটি টাকার মতো হতে পারে।
আরও পড়ুন: এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আরশাদের পদত্যাগ, প্রার্থী হচ্ছেন না নির্বাচনেও
আসন সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির আলোচনার কথা শুনেছি, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা হতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা রয়েছে, সংস্কারপন্থি বা ‘হ্যাঁ’ ভোটের পক্ষে যারা তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করার। আমরা সে বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছি।
জানতে চাইলে এনসিপির সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী জোট, আসন ও সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছি। সেই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের সঙ্গে হওয়া আলোচনার বিষয়ে আমরা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এখনো পৌঁছতে পারিনি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সহকারী জেনারেল ও কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের শরীক ৮ দলের বাইরেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এনসিপির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো কোনো-কিছু চূড়ান্ত হয়নি। হয়তো দুই-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সেসময় আমরা বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাব।