২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:২৪

দেশের উদ্দেশে মধ্যরাতে লন্ডন থেকে রওনা হবেন তারেক রহমান

তারেক রহমান   © সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) প্রিয় মাতৃভূমির উদ্দেশে লন্ডন ছাড়ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টা) তিনি হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ নিয়মিত ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। 

এ তথ্য জানিয়ে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারেক রহমানের ফ্লাইট বুধবার মধ্যরাতে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে তারেকের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরাও থাকছেন।

ঢাকায় নেমেই তিনি রাজধানীর তিনশ ফিট এলাকায় তার সম্মানে বিএনপি আয়োজিত এক গণসংবর্ধনায় যোগ দেবেন। অনুষ্ঠানটি হবে সংক্ষিপ্ত। সেখানে তিনি (তারেক রহমান) একক বক্তা। বিএনপির প্রত্যাশা, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক ছাড়াও সাধারণ জনতা এই সংবর্ধনায় অংশ নেবেন। 

দলটির প্রত্যাশা, উপস্থিতির দিক থেকে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অতীতের সব রাজনৈতিক সমাবেশকে ছাড়িয়ে যাবে। পরদিন জুমার পর শেরেবাংলা নগরে তারেক রহমান তার বাবা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন। এরপর সেখান থেকে সড়কপথে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, শনিবার তারেক রহমান নিজে ভোটার হতে যা করতে হয়, সেই কাজগুলো করবেন। এছাড়া সেদিন শরীফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত এবং পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে যাবেন। তবে এসব এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যথা সময়ে দিনের কর্মসূচি সংবাদমাধ্যমে জানানো হবে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এ সময় তার সঙ্গে থাকবেন স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও কন্যা জায়মা রহমান।

বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও চর্চিত ওয়ান ইলেভেন বা ১/১১’র রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে কারামুক্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় সপরিবারে যুক্তরাজ্যে চলে যান তারেক রহমান। এরপর থেকে তিনি লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন। স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে চলতি বছর কয়েকবার দেশে এলেও তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেননি। এমনকি মায়ের অসুস্থতায়ও আসতে পারেননি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের নেতা বাংলাদেশ বিমানের এক নিয়মিত ফ্লাইটে লন্ডন থেকে বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে যাত্রা বিরতির পর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করবেন ইনশাআল্লাহ। ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অভ্যর্থনা জানাবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

বাংলাদেশের সাবেক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বিএনপির বগুড়া জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে। ১৯৮৮ সালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এরপর খুব দ্রুত তিনি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। 

বর্তমানে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপি পরিচালনা করছেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে দলের চেয়ারপার্সন মা খালেদা জিয়ার পাশাপাশি দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাকে বরণ করে নিতে ঢাকায় স্মরণকালের অন্যতম বড় গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে আগমনকে কেন্দ্র করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকায় জনসমুদ্র সৃষ্টি হবে। সারাদেশে থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতা প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে দেখতে, তার কথা শুনতে এবং তাকে সংবর্ধনা দিতে ঢাকায় ছুটে আসবেন। কমপক্ষে অর্ধকোটি লোকের সমাবেশ হবে তারেক রহমানের সংবর্ধনায়।

এর আগে, গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে লন্ডনে আয়োজিত এক ঘরোয়া সভায় তারেক রহমান বলেন, আপনাদের দোয়ায় ২৫ তারিখ আমি দেশে ফিরে যাব। অনুরোধ করছি, সেদিন কেউ বিমানবন্দরে যাবেন না। তিনি আরও বলেন, এই অনুরোধ অমান্যকারীদের ব্যক্তিগত স্বার্থান্বেষী হিসেবে গণ্য করা হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তিনি সরাসরি এক্সপ্রেস ওয়ে দিয়ে রাজধানীর কুড়িল সংলগ্ন পূর্বাচল হাইওয়ে এক্সপ্রেস এলাকায় যাবেন। সেখানে তার সম্মানে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। এ আয়োজনের জন্য ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিক অনুমতিও পেয়েছে বিএনপি। মঞ্চ নির্মাণসহ সার্বিক প্রস্তুতিও শেষ করে এনেছে বিএনপি। 

আরও পড়ুন: কাল রাজধানীর যেসব সড়ক এড়িয়ে চলবেন

তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে কাজ করছেন। এদিকে, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত দলটি। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন হ মুনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে উনার যে ধরনের ‘থ্রেট’ রয়েছে তাতে উনাকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) নিরাপত্তা দেয়া উচিত। তবে এটা যেহেতু সরকারের সিদ্ধান্ত, ফলে সেটা না পাওয়া গেলে অধিক পুলিশ ও দলীয় নিরাপত্তা টিম গঠন করে উনার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত।

তবে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নিরাপত্তায় সরকার থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) চাওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন তার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার (অব.) শামসুল ইসলাম। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

শামসুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করছে। বর্তমানে যতটুকু নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, তার চেয়েও বেশি প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। 

তারেক রহমানের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এর মধ্যে অতীতে মায়ের সংকটকালেও দেশে ফিরতে না পারার প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাস নতুন করে এ বিষয়ে গুঞ্জন সৃষ্টি করে। সম্প্রতি তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময়সূচি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কয়েকটি গণমাধ্যমে তার নিরাপত্তায় এসএসএফ চাওয়া হয়েছে—এমন আলোচনা শুরু হয়। তবে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি নাকচ করেন তার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শামছুল ইসলাম। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা ও আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

এদিকে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে গণসংবর্ধনা শেষে বসুন্ধরা এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গেল ২৩ নভেম্বর রবিবার রাত থেকে চিকিৎসাধীন আছেন। এরপর সেখান থেকে তিনি সরাসরি রাজধানীর গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাসায় যাবেন। সেখানেই তিনি সপরিবারে বসবাস করবেন।