সত্যি কি চা বেচতেন মোদি!
ভারত চলছে নির্বাচনী ডামাডোল। ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ভোট শেষে হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণও প্রথম ধাপের সহিংসতা, গুলি, ভাংচুর, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি, ইভিএম-জটের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে।
এরইমধ্যে যে বিষয়টি আলোচনার শীর্ষে উঠে এসেছে তাহলো ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রধান নরেন্দ্র মোদি সত্যি কি চা বিক্রি করতেন? দেশটির মধ্যপ্রদেশের বডনগর স্টেশনে জীর্ণশীর্ণ যে চায়ের দোকানটি পড়ে আছে, সে দোকানে বসেই নরেন্দ্র মোদি চা বেচতেন বলে জানেন অনেকে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, বেশকয়েক বছর আগে বডনগর রেলস্টেশন চত্বরটি লোকসমাগমে পরিপূর্ণ ছিল। স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম ও এর আশেপাশে দোকানের অভাব ছিল না। কিন্তু এখন একটি দোকানও নেই সেখানে।
তবে আর সব দোকানের অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া গেলেও মোদির চায়ের দোকানটি এখনও আছে। অবিকল পুরনো অবস্থাতেই রাখা হয়েছে সেটিকে। কিন্তু সেখানে নেই কোনো চায়ের দোকানি। জ্বলে না কোনো চুলা। দোকানটির ভাঙাচোরা টিনে যে কথাটি লেখা রয়েছো— ‘নরেন্দ্র মোদির চায়ের দোকান। আপনি সিসিটিভির নজরে।’
জানা গেছে, দুই বছর আগে মোদি এই স্টেশন ঘুরে গেছেন। আট কোটি রুপি ব্যয়ে পুরো স্টেশনটিকে নতুন করে গড়ে তোলে রেল মন্ত্রণালয়। সেসময় ‘মোদী’র সেই চায়ের দোকানটি একটুও ছোঁয়া হয়নি। অবিকল আগের অবস্থাতেই রাখা হয়েছে। কিন্তু তুলে দেয়া হয় বাকি সব দোকান। বিষয়টিকে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ বলেই ভাবছেন ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকরা। ভোটে ভারতীয়দের নজর কাড়তেই ‘চা-ওয়ালা’ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন মোদি!
চলমান লোকসভা নির্বাচনে মোদির সেই চায়ের দোকানটি আবারও আলোচনায় চলে এসেছে। কয়েকদিন আগে ছত্রিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেছেন, ‘বডনগর স্টেশনে মোদি যে কেটলিতে চা বেচতেন এখনও পর্যন্ত সেই কেটলি কেউ দেখেননি। আজ পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি যিনি মোদির হাত থেকে চায়ের পেয়ালা নিয়েছেন।’
একইরকম বক্তব্য এসেছে দেশটির হিন্দু পরিষদের সাবেক নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ারের কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, ‘মোদিকে চা বেচতে কখনও দেখা যায়নি। শুধু ভোটব্যাংক বাড়াতে চা-ওয়ালা ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন মোদি।’
কংগ্রেস নেতারাও এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, মোদির চা বেচা ভোটের রাজনীতিতে শ্রেফ ফাঁকিবাজি নয় তো? এ নিয়ে আবারও অনুসন্ধানে নেমেছিলেন দেশটির সাংবাদিকরা। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তির কাছে গিয়ে তারা প্রশ্ন ছুড়েঁন - সত্যিই কি মোদি কখনও চা বেচেননি? চা বানিয়ে কাউকে খাওয়াননি? তাহলে বডনগর স্টেশনের এই জরাজীর্ণ চায়ের দোকানটি তাহলে কার?
স্টেশনের কাছাকছি ষাটোর্ধ বয়সী রমনজি তাখাজির নামের এক দোকনিকে পাওয়া গেল। প্রশ্নটির জবারে তিনি বলেন,‘মোদিকে কখনও চা বেচতে দেখিনি। তবে তার বাবা দামোদর দাসের চায়ের দোকান ছিল। আর সেটা স্টেশনের ভেতরে রাখা ওই টিনের দোকানটি নয়। স্টেশনের বাইরে ছোট্ট একটি দোকান চালাতেন মোদির বাবা। ’
তাহলে স্টেশনের সেই পুরনো দোকানটি কার? এমন প্রশ্নে তিনি হেসে বলেন, ‘ওটা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দেখুন, ওই এক চায়ের দোকানই আছে সেখানে। অথচ আশপাশের একশ’দোকান উচ্ছেদ করে দিয়েছে প্রশাসন। সেসব দোকানের কর্মচারীরা এখন বেকার।’
সাংবাদিকরা এরপর খোঁজ পেয়ে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্কুলের বন্ধু জাসুদ খানকে। যিনি ওই এলাকার একটি মসজিদের নিচে দোকানদারি করেন। তাকেও একই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মোদি নিজে চা বানাতেন না! দোকানে তার কর্মচারী ছিল। তবে ওই স্টেশনে তার একটি চায়ের দোকান ছিল এটা সত্য।’
সূত্র: আনন্দবাজার