জোটসঙ্গীদের আসন বণ্টন, নিজেদের কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের আভাস বিএনপির
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীতা তালিকায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে। এতে বেশি কিছু নতুন নাম সংযুক্ত হয়েছে। এছাড়া, বিগত ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখা বিএনপির বিশ্বস্ত আন্দোলন সঙ্গীদের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বিএনপি।
জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে আসন নিয়ে তৈরি সমস্যা মীমাংসা করেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ জোট শরিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে চূড়ান্ত সমাধানে এনেছেন বলে জোট নেতাদের থেকে জানা গেছে।
বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনের জোটসঙ্গী একাধিক দলের নেতা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, নির্বাচন কমিশনের আরপিও বিধি অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বিধানের কারণে অনেকেই ছোট রাজনৈতিক দল হিসেবে অসুবিধায় পড়েন। তাদের সামনে বিএনপি ‘অপশন’ দেয় হয় নিজেদের প্রতীকে ভোট না হয় নিজ দল বিলুপ্ত করে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করার। এতে একটি দলের নেতাকে বিএনপির হাইকমান্ড নিজ দল বিলুপ্ত করে ধানের শীষে ভোট করার প্রস্তাব দেন। জোটের ওই নেতা নিজ দল থেকে পদত্যাগ করে ইতোমধ্যে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করে বিএনপির সদস্য হয়েছেন। এখন যেকোনো সময় তাদের বিষয়ে প্রার্থীতা ঘোষণা দেবে বিএনপি।
জানা গেছে, প্রার্থীতা চূড়ান্ত করা নেতাদের কাছে গতকাল শনিবারই সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর রবিবার রাতে গুলশানেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালী স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে জোট ও বিএনপির বেশ কয়েকটি আসন পরিবর্তনের নির্দেশনা জানিয়ে দেন। নির্বাচনের মাঠে জোরালোভাবে নামতেও বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সংশ্লিষ্টদের কাছে তাদের তিনজন পোলিং এজেন্ট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনার জন্য একজন সোশ্যাল ম্যানেজারসহ আরও কিছু নির্বাচনী কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের জন্য বিএনপি নাম ও বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে। সোমবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে নির্বাচনে প্রার্থীদের ভোটের প্রচার-প্রচারণা চালানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ম্যানেজারদের প্রশিক্ষণ দেবে বিএনপি। সেই প্রশিক্ষণে জোটসঙ্গী প্রার্থীদের লোকও অংশ নেবেন।
যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গী এক দলের প্রধান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিএনপি আসন ছাড়ছে না। জোট ও আন্দোলন শরিকদের নির্দিষ্ট কিছু নেতাকে নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচন করলে সেখানে বিএনপি প্রার্থী দেবে না। শরিক দলকে আসন দিলে যারা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে না, তাদের বিজয় নিয়ে সন্দেহ আছে, তাই অনেকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হবেন।
ইতোমধ্যে লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে মনোনীত নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম নিজের গড়া বাংলাদেশ এলডিপি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের তিন নেতাকে আসন নিশ্চিত করেছে বিএনপি।
বৈঠক সূত্রে খবর, আগামী নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ আসনে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং ঝিনাইদহ-২ আসনে দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানকে ছাড় দেবে বিএনপি। তবে নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী তাদেরকে নিজ দলের প্রতীক `ট্রাক' নিয়ে লড়তে হবে। এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ লড়বেন নড়াইল-২ আসন থেকে। ঢাকা-১২ আসন থেকে লড়বেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের প্রার্থী। নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) থেকে নির্বাচন করবেন।
ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুই দফায় ২৭২টি আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেন। তবে, প্রার্থীতা ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে নেতাকর্মীদের ব্যাপক বিক্ষোভ-বিরোধিতা, দলীয় প্রার্থীকে নেতাকর্মীদের প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপি বেশ সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই বেশ কিছু আসনে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বেশ কিছু বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন, নেতাকর্মীবিহীন প্রার্থীকে সরিয়ে নতুন প্রার্থী ঘোষণা দেবে বিএনপি।
পরিবর্তিত প্রার্থী হিসেবে মুন্সিগঞ্জ-২ অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, টাঙ্গাইল-৩ (কালিহাতী) বেনজির আহমেদ টিটো, নোয়াখালী-৫ বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, মৌলভীবাজার-১ আসন শরিফুল হক সাজু ধানের শীষ পেতে পারেন। এছাড়া রাজশাহী-৫ (পুটিয়া-দূর্গাপুর), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ ও ৫, চট্টগ্রাম-৪, ৯ এবং ১২—সহ আরও কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।
যদিও এ বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতা কথা বলতে চাননি। তারা বলেছেন, এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। তা খুব দ্রুতই।