দুই দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চায় ভারত: প্রণয় ভার্মা
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক চায় ভারত। উভয় দেশই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। শনিবার মৈত্রী দিবসের অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার এ কথা বলেন।
ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে জানানো হয়, শনিবার ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন ঢাকার ইন্ডিয়ান কালচারাল সেন্টারে মৈত্রী দিবস-২০২৫ এর ৫৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক জাঁকজমকপূর্ণ উদযাপনের আয়োজন করে। পরিবেশনার মধ্যে ছিল নাটক ও নৃত্য পরিচালনা এবং ব্যান্ড সঙ্গীত। ‘৭১ ইন সাইলেন্স’ শিরোনামের প্রথম পরিবেশনা ছিল সুন্দরম প্রোডাকশনের একটি প্রতিবন্ধী-অন্তর্ভুক্ত থিয়েটার পরিবেশনা, যার পরিচালনা করেছিলেন রমেশ মায়াপ্পন। এই পরিবেশনাটিতে শারীরিক গল্প বলার কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্মের গল্প চিত্রিত করা হয়েছিল, যুদ্ধের সূচনা এবং এর পরিণতি চিত্রিত করা হয়েছে।
এরপর বাংলাদেশের বিখ্যাত নৃত্য পরিচালক আনিসুল ইসলাম হিরো পরিচালিত সৃষ্টি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের একটি নৃত্য পরিবেশনা ছিল। যেখানে বাংলাদেশের প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি শেষ হয় ৯০ এর শেষ দিকের ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত জনপ্রিয় বাংলাদেশি রক ব্যান্ড শিরোনামহীনের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, সাংস্কৃতিক কর্মী, তরুণ এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, এই দিনটি ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি মাইলফলক, যা মুছে ফেলা যাবে না। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সমতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক, গঠনমূলক, দূরদর্শী এবং উভয়ের জন্য লাভজনক সম্পর্ক চায়, যেখানে দুই দেশের জনগণই প্রধান অংশীদার। উভয় দেশই জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন। যার মূল অনুপ্রেরণা হবে অতীতের অভিন্ন ত্যাগ এবং ভবিষ্যতের নতুন আকাঙ্ক্ষা।
৬ ডিসেম্বরকে মৈত্রী দিবস পালনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের সেই দিনটিকে স্মরণ করা হয়, যখন ভারত বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার দশ দিন আগে, যা বাংলাদেশের প্রতি সমর্থনের একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে আরও গতি যোগ করে।
হাইকমিশনা জানায়, মৈত্রী দিবস একটি ঐতিহাসিক স্মৃতির চেয়েও বেশি কিছু। এটি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ এবং পারস্পরিক সহানুভূতির প্রতীক। এর উদযাপন হল অভিন্ন ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভবিষ্যতের অংশীদারিত্বের প্রতি নতুন করে অঙ্গীকার।
২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফর করেছিলেন। সেই সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়, ৬ ডিসেম্বর মৈত্রী দিবস হিসেবে পালন করবে দুই দেশ। সেই থেকে দিনটি মৈত্রী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ২০২১ সালে ঢাকা ও দিল্লি ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ ও ভারতের দূতাবাস যৌথভাবে মৈত্রী দিবস পালন করেছে।