০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:২১

মেডিকেল বোর্ড নিরাপদ মনে করলেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন  © সংগৃহীত

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে কাতারের আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, মেডিকেল বোর্ড নিরাপদ মনে করলেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যর বিষয়ে তথ্য দিতে হাসপাতাল গেটে গণমাধ্যমের সামনে তিনি এ কথা বলেন।

ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে আমরা ওনাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলাম। কিন্তু কাতারের আমির যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, সেই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কারিগরি ত্রুটির কারণে আসতে পারে নাই। অন্যদিকে মেডিকেল বোর্ড জরুরিভাবে মেডিকেল বোর্ডের সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ওই মুহূর্তে ওনার ফ্লাই করার সঠিক হবে না। সে জন্যই আমরা ওনাকে বিদেশ নেওয়া কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতেও হয়তো শারীরিক অবস্থায় বলে দেবে যে ওনাকে কখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া যাবে অথবা নিয়ে যাওয়া হবে। তবে আমাদের মেডিকেল অ্যাম্বুলেন্স সব সময়ই প্রস্তুত আছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ বলেন, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকলেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা এবং ওনার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি, অর্থাৎ চিকিৎসাগত দিক থেকে এটি অত্যন্ত প্রাধান্য পাচ্ছে। আমাদের মেডিকেল বোর্ডের সম্মানিত সদস্যরা ইউকে এবং আমেরিকা থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে যারা অংশগ্রহণ করছেন, ইভেন চায়না থেকেও, সবাই ওনার ফিজিক্যাল কন্ডিশনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশের সব মানুষ ওনার সুস্থতা চায়, চিকিৎসকরা চায়, দেশের আবালবৃদ্ধ-বণিতা সব ধর্মের, সব রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ চায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি করছেন এবং এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের মতামতকেই উনি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। দলও সেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’

আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে অন্য স্কুলে চাকরির সুযোগ পাবেন শিক্ষকরা

ডা. জাহিদ বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা বিগত ছয় বছর ধরে ওনাকে বিভিন্ন সময় যে সেবা দিয়ে এসেছেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এবং অত্যন্ত প্রফেশনালি দে আর হ্যান্ডলিং দ্য ম্যাটার। প্রফেসর ডাক্তার শাহাবুদ্দিন তালুকদার এখানে আছেন। ডা. এ জেড এম সালেহ, ডা. মাসুদ মাসুম কামাল এবং ডা. জিয়াউল হক, ডা. জাফর ইকবাল, ব্রিগেডিয়ার ডা. সাইফুল ইসলাম, ডা. সিজান লুৎফুল আজিজ, প্রফেসর এ কিউ এম মহসিন, প্রফেসর ডা. শামসুল আরেফিন এবং খালেদা জিয়ার প্রধান চিকিৎসক ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী এবং প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ নুরুদ্দিন আহমদ আছেন। দেশের বাইরে থেকে জন পেট্রিক কেনেডি এবং জেনিফার ক্রস এবং প্রফেসর গোলস্টন এই তিনজন লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসক এবং প্রফেসর ড. রিচার্ড লন্ডন ব্রিজ হসপিটালের  কিংস কলেজের প্রফেসর, শাকিল ফরিদ লন্ডন ব্রিজ ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজি সেন্টারের সঙ্গে জড়িত এবং কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর গার্বি যিনি ভ্যালু হার্ট ডিজিজের বিশেষজ্ঞ, ইউএসএ থেকে প্রফেসর হাবিবুর রহমান লুলু এবং প্রফেসর ড. জন হ্যামিল্টন, প্রফেসর ডা. হামিদ, প্রফেসর ড. রফিকউদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর ড. জর্জিসার উনার চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। কাজেই সব সময় এই চিকিৎসার সমন্বয়ের জন্য ডা. জুবায়দা রহমান গতকাল লন্ডন থেকে এসেছেন এবং উনিও সার্বক্ষণিকভাবে এই চিকিৎসা মেডিকেল বোর্ডের সকাল-বিকাল যে মেডিকেল বোর্ড বসে পরামর্শ করে সেই সব বিষয়ে উনি অংশগ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে, বিশেষ করে সৈয়দ শামিলা রহমান সিঁথি এবং শামীম ইসকান্দারসহ পরিবারের সদস্যরাও মেডিকেল বোর্ডের সভা বসার পরবর্তী সময়ে তাদেরও এবং আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতাদের যথাযথভাবে অবহিত করে রাখা হয়েছে। কাজেই ওনার চিকিৎসার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়াতে আমি তো সোশ্যাল মিডিয়া দেখার সুযোগ হয় না। আমি দেখিও না। কিন্তু কোন কোন সময় অনেক গুজব শোনা যায় বা অনেকে বলে বেড়ায়। আমি সবাইকে অনুরোধ করব দয়া করে দেশনেত্রীর প্রতি যদি আপনাদের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ অনুরোধ করব আপনারা দয়া করে। যে শর্ট ফ্যাক্ট এটার বাইরে কেউ গুজব ছড়িয়ে মানুষকে দয়া করে বিভ্রান্ত করবেন না। শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করেন। আল্লাহর অশেষ সহমতে সব সময় উনি এসছেও প্রতিকূল অবস্থা থেকে আল্লাহ উনাকে সুস্থ করেছেন। আপনাদের সবার দোয়ায় আমরাও এবার এবং মেডিকেল বোর্ড অত্যন্ত আশাবাদী যে এবারও ওনার যে শারীরিক জটিলতা এটা থেকে আপনাদের দোয়া এবং আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ইনশাআল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন।’

ডা. জাহিদ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। যখনই ওনাকে বিদেশ নেওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ড যথোপযুক্তভাবে তৈরি মনে করবেন, শারীরিকভাবে মনে হবে যে ওনাকে সেফলি ট্রান্সফার করা যাবে তখনই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ, ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা এয়ারফ্লাই করবেন তখন যে হাই অল্টিচউডে মানুষের শারীরিক যে পরিবর্তন হয়, সেটির সাথে খাপ খাওয়ানো একজন অসুস্থ মানুষের পক্ষে সব সময় সম্ভব হয় না। কাজেই এই জিনিসটি খেয়াল রেখে আপনারা দয়া করে বিভ্রান্তও হবেন না। দয়া করে কেউ বিভ্রান্তি র চেষ্টা করবেন না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাতার সরকার এবং আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতা করছেন এবং তারা ওনার বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে উনাদের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।’

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক চিকিৎসা সহায়তা ও আন্তরিক সেবা দেওয়ার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স এবং সব স্টাফদের প্রতি আন্তুরিক কৃতজ্ঞতা জানান এবং অন্য রোগীদের অসুবিধার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

প্রসঙ্গত গেল ২৩ নভেম্বর রবিবার রাতে অসুস্থ অবস্থায় এভারকেয়ার হসপিটালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন খালেদা জিয়া।