আপা, এক বুক কষ্ট নিয়ে লিখছি
ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ এখনো মিটমাটের পথ দেখা যাচ্ছে না। কমিটি ঘোষণার একসপ্তাহ পার হলেও তা নিয়ে নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিতদের আন্দোলন-প্রতিবাদ সমানে চলছে। এদিকে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালাতেও পিছিয়ে ছিলো না নতুন কমিটির পদপ্রাপ্ত নেতারা ও তাদের অনুসারীরা। এ পর্যন্ত পদবঞ্চিতদের উপর দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
গত বুধবার কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এখনো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় পদবঞ্চিতরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
এ ঘটনায় নিজের মত ব্যক্ত করেছেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কর্মসূচী ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে একটি খোলা চিঠি লেখেন।
পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতার খোলা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
প্রিয় আপা, ছোট ছোট বাচ্চারা আপনাকে আনন্দ নিয়ে চিঠি লেখে। গণমাধ্যমে দেখি, আপনি সেইসব চিঠির উত্তরও দেন। একজন প্রধানমন্ত্রী কত সাধাসিধে এসব দেখে কি-যে আনন্দ লাগে চোখের কোণে অশ্রু চিকচিক করে। আপা আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। আমাদেরও ইচ্ছে জাগে একদিন আপনাকে চিঠি দিব। যে চিঠিতে আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাব। এই যে, সব কিছু তুচ্ছ করে দিন রাত পরিশ্রম করে দেশটাক গড়ে তুলছেন তার জন্য ধন্যবাদ জানাব। কিন্তু আর লেখা হয়ে ওঠে না। আরও আনন্দময় দিনে চিঠি লেখার জন্য অপেক্ষায় আছি। তবে কি আপা জানেন আজ আপনাকে চিঠি লিখছি ঠিকই, আনন্দ নিয়ে নয়। বুকের মধ্যে চাপা কষ্ট নিয়ে। বিশ্বাস করেন আপা, যখন লিখছি তখন টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। যখন লিখছি তখন অঝড়ো কান্না পাচ্ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আপা, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
আপা আপনি ভালো আছেন। আপনি ভালো থাকেন এটাই আমাদের কয়মনে সাধনা। এটাই আমাদের জপমালা। কারণ আপনি ভালো আছেন বলেই দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। আপনি ভালো আছেন বলেই আমরা রোজ রাতে স্বপ্ন দেখি একদিন এই গরীব দেশটার সব দুঃখ দুর্দশা দূর হয়ে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে দেশটা স্বাধীনতা করেছিলেন সেই স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ আমরা পাব।
আপা আপনি ভালো আছেন। কিন্তু আপনার এই পাগল ভাইগুলো ভালো নেই। একদম ভালো নেই। ভালো থাকতে দেওয়া হয়নি। কত সুন্দর জীবনই না আমাদের ছিল। এখন বুকের ভেতর ক্লান্ত হাওয়া হু হু করে। সকাল বিকাল বুকের ভেতর জোয়ারের মত কষ্ট বাড়ে। আপা, এমনটা হওয়ার কথাছিল না। মন থেকে ভালোবেসে শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ করি। ক্যাম্পাস জীবনে অন্য সবার প্রেম, গান কবিতা হয়েছে। আমাদের একমাত্র প্রেম ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পাঠশালা ছাত্রলীগ। আমাদের গান ও কবিতা ছিল জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। আমাদের যৌবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টি কেটেছে ছাত্রলীগ নামের অনন্ত যৌবনা সংগঠনের হাত ধরে। এতে আমাদের আফসোস নেই বরং গর্ব হয়।
আপা, বিগত সময়েও ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা হয়েছে অনেকে মারা গেছে। আমরা যখন মিছিলে যাই তখন আমাদের মনেও ভয় হয়, হয়ত আর ফিরব না। হয়ত এটাই আমার জীবনের শেষ মিছিল। কিন্তু মিছিলে যাই কারণ প্রেমটা হৃদয়ের বন্ধনটা আত্মার। আপা, দেশে জঙ্গি হামলা হয়, দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়। জ¦লন্ত বাসে আগুন দেয়। অনির্দিষ্টকালের হরতাল অবরোধে হাজার হাজার কোটি টাকার জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট হয়। এত কিছুর মধ্যে আমার ক্লাসের সহপাঠী বন্ধুটি ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিরাপদ দূরেত্বে আশ্রয় খুঁজে। আমরা পালিয়ে যাই না কিংবা বসে থাকি না। আমরা জীবনের মায়া তুচ্ছ করে স্লোগান ধরি, আমার মাটি আমার মা পাকিস্তান হবেনা। ঝাঁঝালো রোদ কি কনকনে শীত, ঝড় বাদল কিছুই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। আমাদের রাজপথ ঘুমায় না জেগে থাকে। আমরাও অতন্দ্রপ্রহরির মত জেগে থাকি।
আপা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি বৃহৎ পরিবার। যে পরিবারের প্রত্যকটি সদস্য একে অন্যের বিপদের সময় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে, যে কোনো প্রয়োজনে ঝাপিয়ে পড়েছে। অতীতে তাই হয়েছে। না-হলে কতবার যে আমাদের পরাজয় হত। আমরা আহত ভাইটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাজপথে চিৎকার করেছি, প্রতিবাদ করেছি কিন্ত ফেলে যাইনি। আমরা লাশ কাঁধে নিয়ে মিছিল করেছি তবুও রক্ত চক্ষু ভয় পায়নি। আমরা ভাই আমার রক্ত আমার বোন আমার সাহস। কিন্তু আপা পরিতাপের বিষয় আজ সেই পরিবারের সদস্য দুই দলে বিভক্ত। আজ সেই পরিবারের সদস্য একে অন্যের রক্ত ঝড়াতে ব্যস্ত। কারো মধ্যে সহমর্মিতার ছুঁয়া নয় বরং প্রতিহিংসার খড়গ। সবার মেলবন্ধনে যে পরিবার গড়ে উঠেছিল সেই পরিবার আজ ধ্বংসের পথে। আজ বোনের রক্ত ভাই হাতে। আজ ভাই ভাইয়ের শত্রু। এমনটা তো চাইনি, এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না।
আপা আপনি জানেন একটা কমিটি হয়েছে। অনেক ত্যাগী কর্মী সেখানে স্থান পায়নি। যারা স্থান পায়নি তারা প্রতিবাদ করেছে বিদ্রোহ বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু তাই বলে তারা বখে যায়নি। তারা প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়েছে তাদের সেখানে মেরে রক্তাক্ত করা হয়েছে। সে কি ভয়ংকর দৃশ্য। ঘুমাতে পারি নাই আপা, কয়েক রাত ঘুমাতে পারি নাই। আপা জানেন, পরিশ্রেমের সংগঠনে মূলহীন ভেসে আসা মানুষের স্থান হয় কিন্তু সংগঠন করা ছেলেটা ব্যক্তি স্বার্থে ছিটকে পড়ে! কিন্তু কেনো? আমাদের দাবি তেমন কিছু ছিলনা শুধু বির্তকীতদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠিছিল। কিন্তু না, উল্টো তাদেরই তার প্রতিদান দিতে হল। সমগ্র নগরবাসী যখন ঘুমে অচেতন তখন আবারও আমাদের বোনগুলোকে ওরা বেধরক মেরেছে। সবার সামনে অপমান লাঞ্চিত করেছে।
আপা কষ্ট হচ্ছে। অনেক কষ্ট হচ্ছে। আপা আপনিই তো আমাদের সব। আপনিই তো আমাদের অভিভাবক, আমাদের পিতা-মাতা। আপনার কাছে আশ্রয় চাওয়া ছাড়া আর কোথায় যাব? কোথায় গেলে বিচার পাব?