২৮ নভেম্বর ২০২৫, ২০:৩১

ডাকাতি ঠেকাতে সহায়ক পুলিশ লাগলে লোক দেব, জামায়াত প্রার্থীর বক্তব্য ভাইরাল

চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমানের সঙ্গে থানায় কথা বলেছেন চট্টগ্রাম-১ আসনে (মিরসরাই) জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী সাইফুর রহমান  © সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পুলিশের সাথে সহায়ক শক্তি হিসেবে জামায়াত-শিবির কর্মীদের দিতে চাওয়া সংক্রান্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমানের একটি ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এক সপ্তাহ আগে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে থানায় গিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমানকে এসব কথা বলেছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

তবে সাইফুর রহমানের দাবি, সেদিন পুলিশের সাথে মিরসরাইয়ে চুরি-ডাকাতি বন্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতে চেয়ে কথাগুলো বলেছিলেন তিনি। সেই কথোপকথনের একটি ভিডিও কাটছাঁট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে স্বার্থান্বেষী মহল।

ভিডিওটিতে মিরসরাই থানার ওসি আতিকুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের এমপি প্রার্থী সাইফুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘এই যে মিরসরাইতে ক্রমবর্ধমান ডাকাতি চলছে, কিন্তু যদি আমরা দু-একটা ডাকাতকে স্ট্যান্ডবাই ধরতে পারতাম, শাস্তি দিতে পারতাম এবং তাদেরকে কিছু একটা পিপলদের নজরে আনতে পারতাম, তখন হয়তো সবাই মনে করত যে এখানে মোটামুটি একশনমূলক কাজটা বেশি হচ্ছে। তো আপনি আপনার পক্ষ থেকে বলবেন আসলে পরিস্থিতিটা কী, কেন হচ্ছে, কি জন্য হচ্ছে। পার্সোনালি আমি বা আমার দল মনে করি, আপনি যদি লজিস্টিক সাপোর্ট চান আপনার পুলিশের সাথে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে, যদি মনে করেন যে সহায়ক পুলিশ লাগবে, আমি শীঘ্রই জামায়াতের লোক দেব।’

ওসিকে তিনি বলেন, ‘যদি মনে করেন যে গোয়েন্দার লোক লাগবে, আপনি ইউনিয়ন ভিত্তিতে গোয়েন্দার টিম গঠন করেন, আমি স্পেশালি লোক সাপ্লাই দেব। তারপরও আমি ডিজিএফআইয়ের যিনি এখানে দায়িত্বে ছিল, তার কাছে ফোন করে কথা বলেছি, এসবির (পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ) যিনি ছিল তাকেও আমি বলেছি। আমি বললাম যে দেখেন এগুলোর সাথে আপনারা সবাই সম্পৃক্ত, আপনি ইনফরমেশন দিলে না পুলিশ একশনে যাবে। তা আপনারা কি কাজ করেন? তাহলে আপনাদের টিমটা কোথায়? এই সামগ্রিক বিষয়ে আসলে আপনার একটু বক্তব্য আসা দরকার।’

‘আমরা সত্যিকার অর্থে সহযোগিতা করতে চাই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা তো আর ডাকাত ধরার জন্য এক এক বাড়িতে হানা দিতে পারি না। উল্টো আমাদেরকে ডাকাত হিসেবে ওরা চিহ্নিত করে ফেলবে। এরকম পরিস্থিতি অনেক হয়েছে, ভিক্টিমাইজ হয়ে যাচ্ছে। এটা পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে আসলে কি করতে পারে! আমরা রাজনৈতিকভাবে হয়ত কথা বলব, সবার কাছে যাব, মিডিয়ায় বলব, আপনাদের কাছে আসব, কিন্তু কার্যকরী উদ্যোগ আপনাকে নিতে হবে। আপনি যদি নেন, সে ক্ষেত্রে আমরা আপনার পাশে থাকব এই কথাগুলো বলার জন্য আমি আজকে আসছি।’

সাইফুর রহমানের এমন বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে সাইফুল্লাহ সাইফ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমানকে হেকমতে ভরা কণ্ঠে নসিহত করেছেন। উনি কিন্তু মিরসরাই আসনে দাঁড়িপাল্লা মার্কা নিয়ে সংসদ পদপ্রার্থী। বর্তমানে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদেও আছেন। এবার সংসদ সাজবে ‘যেমন খুশি তেমন সাজাও মন্ত্রে।

সাইফুল্লাহ সাইফের পোস্টের মন্তব্যের ঘরে মো. জহিরুল আলম কাউসার নামে একজন লিখেছেন, ভাই হুদাই পুলিশের পেছনে টাকা খরচ করছেন, বিনা পয়সায় যদি গোয়েন্দা আর সিভিলিয়ান শিবির বাহিনী পাওয়া যায়- আর কি কোন চিন্তা লাগে। এমডি কাদের মোল্লা নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, এমন জোরজবরদস্তি হাসিনাও করেনি।

জামায়াত প্রার্থী সাইফুর রহমানের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মিরসরাই বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নুরুল আমিন একটি গণমাধ্যমের বরাতে জানান, মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে জামায়াত প্রার্থী সাইফুর রহমান সাহেবের কথোপকথনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার নজরে এসেছে। কথা শুনে মনে হয়েছে উনারাও পুলিশকে আওয়ামী লীগের মত ব্যবহার করতে চায়। এসব কথা মানুষকে বিভ্রান্ত করবে।

এ বিষয়ে মিরসরাই জামাতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান বলেন, এলাকায় ব্যাপক হারে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এসব প্রতিরোধে এক সপ্তাহ আগে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে দেখা করে পদক্ষেপ নেওয়া এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সেটি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আলোচনার পর থেকে বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মানুষ পাহারা শুরু করার পর থেকে চুরি-ডাকাতি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এটি এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু পুলিশের সাথে আমার বলা কথাগুলোকে আগে পরে কেটে-ছেঁটে একটি স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী প্রচার করছে। আমি মনে করি যারা কথা বিকৃত করে প্রচার করছে তারা ডাকাতদের সহযোগী। যে কয়েকটি আইডি থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এগুলো ছড়াচ্ছে আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান চট্টগ্রাম শহরে জরুরি সভায় থাকার কথা জানিয়ে এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।