২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:২১

সাতক্ষীরায় বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে ত্রিমুখী উত্তেজনা, রিভিউ করতে ৭৩ নেতার আবেদন

বিএনপি লোগো ও সাতক্ষীরার মানচিত্র  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

সাতক্ষীরা-২ (সদর–দেবহাটা) আসনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পর জেলায় তীব্র বিরোধ ও ত্রিমুখী উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে তৃণমূল নেতারা ধারাবাহিক বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, প্রতীকী প্রতিবাদ ও লিখিত আবেদন দাখিল করেন। এরই মধ্যে সাবেক পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীকে প্রার্থী করার দাবিতে তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে ৭৩ জন নেতা আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) সাতক্ষীরা পৌরসভা ও সদর–দেবহাটা অঞ্চলের ১৯টি ইউনিয়নের সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বর্তমান ও সাবেক মোট ৭৩ জন নেতা আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মাধ্যমে আবেদনপত্রটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পাঠানো হয়।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাজকিন আহমেদ চিশতী সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তিনি একজন একজন নিবেদিতপ্রাণ, পরীক্ষিত, ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির পতাকা বহন করে আসছেন। রাজনৈতিক প্রতিকূলতা, দমন-পীড়ন, হয়রানি-কোনো অবস্থাই তাঁকে দল ও গণতন্ত্রের পথ থেকে সরাতে পারেনি। বরং প্রতিকূল সময়ে তিনিই ছিলেন সাতক্ষীরার বিএনপি নেতাকর্মীদের সাহস, আশ্রয় ও শক্তি। বিগত নির্বাচনগুলোতে জোটগত কারণে সাতক্ষীরা-২ আসন জামায়াতকে দেওয়া হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরা-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ের জন্য তাজকিন আহমেদ চিশতীর কোনো বিকল্প নেই।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, সাতক্ষীরা-২ আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাজকিন আহমেদ চিশতী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য, সবচেয়ে সংগঠিত এবং সর্বোচ্চ জনসমর্থনপ্রাপ্ত নেতা। তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ ধানের শীষের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, কর্মক্ষমতা এবং মানবিক নেতৃত্বকে অত্যন্ত আস্থার সাথে মূল্যায়ন করে।

আবেদনপত্রে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাতক্ষীরা-২ (সাতক্ষীরা সদর-দেবহাটা) আসনে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। 

এর আগে জেলা বিএনপির বহিষ্কারাদেশ বহাল রেখেই আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আব্দুর রউফকে সাতক্ষীরা-২ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বেন।

এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৩৩ জন নেতা বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) বিএনপি মহাসচিব বরাবর মনোনয়ন পরিবর্তনের আবেদন পাঠান।

রউফের মনোনয়ন ঘোষণার পর সাতক্ষীরায় একের পর এক কর্মসূচিতে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ৩ নভেম্বর বিএনপির  মনোনয়ন ঘোষণার রাতেই শহরের বিনেরপোতা বিসিক মোড় থেকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের সমর্থকেরা মশাল মিছিল বের করেন। মিছিলটি শিল্পী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। ১৮ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে আলিম সমর্থকেরা আমতলা মোড়ে সড়কে শুয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। সর্বশেষ বুধবার ১৯ নভেম্বর আবারও মশাল জ্বালিয়ে সাতক্ষীরা–খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের সমর্থকেরা।

এছাড়াও গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে তাজকিন আহমেদ চিশতীর অনুসারীরা সংগীতা মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে নিউমার্কেট মোড়ে জিরোপয়েন্ট এলাকায় পৌঁছে মহাসড়ক অবরোধ করেন।  অবরোধে আশাশুনি–সাতক্ষীরা, খুলনা–সাতক্ষীরা ও যশোর–সাতক্ষীরা তিনটি লেনেই তীব্র যানজট তৈরি হয়। বিক্ষোভ চলাকালে তারা স্লোগান দেন—  “দুঃসময়ের চিশতী ভাই, মনোনয়নে তাকে চাই”, “অবৈধ মনোনয়ন মানি না”, “৩ তারিখের মনোনয়ন মানি না।”  অবরোধে নারী নেত্রী–কর্মীরাও অংশ নেন। তাদের দাবি, বহিষ্কৃত আব্দুর রউফের মনোনয়ন বাতিল করে তাজকিন চিশতীকে প্রার্থী করতে হবে।

গত ৩ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। সেখানে সাতক্ষীরা-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রউফকে।
সেই ঘোষণার পর থেকেই সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির ভেতরে অস্বস্তি, বিরোধ ও প্রতিবাদ তীব্র আকার ধারণ করে।

একদিকে বহিষ্কৃত রউফের মনোনয়ন, অন্যদিকে তাজকিন আহমেদ চিশতী এবং আব্দুল আলিমকে প্রার্থী করার দাবিতে তৃণমূলের আন্দোলন। এসবের ফলে সাতক্ষীরা-২ আসনে ত্রিমুখী রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।  মনোনয়ন পরিবর্তন করা হবে কি না, এ সিদ্ধান্তের দিকে এখন জেলায় রাজনৈতিক মহলের নজর।