আমরা জুলাই সনদ এবং গণভোট কেন চাই?
সম্প্রতি জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে পক্ষে-বিপক্ষে দরকষাকষি ও পাল্টা যুক্তি বিনিময় চলছে। এরই মাঝে বিষয়টি নিয়ে নিজের অবস্থান ও যুক্তি তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির সভাপতি ড. মির্জা গালিব। তিনি জানিয়েছেন যে, কেন তার সমর্থিত রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ এবং গণভোট চায়?
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ ভ্যারিফায়েড অ্যাকাউন্টে তিনি এ বিষয়ে জানিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।
দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য মির্জা গালিবের ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো:
আমরা জুলাই সনদ এবং গণভোট কেন চাই?
এক, ঐকমত্য কমিশনে যে সব সংস্কার প্রস্তাব আলোচনা হয়ে জুলাই সনদে আসছে, যেহেতু এটা কোনো নির্বাচিত সংবিধান সভার মাধ্যমে হয়নি, সেহেতু গণভোটের মধ্য দিয়ে এর একটা গণতান্ত্রিক লেজিটিমেসি তৈরি করা প্রয়োজন।
দুই, এই সংস্কারকে আমরা গণভোট ছাড়া পরের সংসদের হাতে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে চাই না। কারণ, যে রাজনৈতিক দলই পরের সরকার গঠন করুক না কেন, তারা দলীয় স্বার্থের উপরে উঠে দেশের স্বার্থে সংস্কার করবে বলে যথেষ্ট আস্থা নেই আমাদের। তার ফলে গণভোটের ম্যান্ডেটের উপর ভিত্তি করে আগামী সংসদকে আমরা চাপে রাখতে চাই, যাতে সংস্কার করতে একটা বাধ্যবাধকতা তারা অনুভব করে।
তিন, এই বাধ্যবাধকতা গণভোট বাদে অন্যকোনো উপায়ে চাপিয়ে দিলে সেটা অগণতান্ত্রিক হবে। কিন্তু গণভোটের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সম্মতিতে এই চাপ তৈরি করলে সেটা আর অগণতান্ত্রিক হবে না।
চার, জুলাই সনদ যদি গণভোটে জিতে যায়, আর পরের সরকার যদি এটাকে বাস্তবায়ন না করে, তাহলে যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ জুলাই সনদ চাচ্ছে/চাইবে, তারা প্রতারিত হয়েছে বলে মনে করবে। রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জনগণের এই অনুভূতি নতুন রাজনীতি তৈরি করবে। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল তার পরের নির্বাচনে শুধু জুলাই সনদকে একমাত্র এজেন্ডা বানিয়ে নির্বাচন জিতে যাবার সম্ভাবনা তৈরি করে ফেলতে পারে। ফলে, আমরা এই রেফারেন্স পয়েন্টটা তৈরি করতে চাই যে, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, যার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সচেতন থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘জুলাইকে কেন্দ্র করেই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে হবে, কোন কমপ্রোমাইজ হবে না’
পাঁচ, জুলাই সনদ যদি গণভোটে হেরে যায়, তাহলে সংস্কারের সব আলোচনা নতুন করে পরের পার্লামেন্টে হবে। সেই পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যরা যেভাবে চাইবে, সে ভাবেই হবে। জুলাই সনদ হেরে যাবার মানে হলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এইভাবে পরিবর্তন চায় না। তারা নিয়মিত সংসদীয় পদ্ধতিতে একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় যতটুকু পরিবর্তন হবে, ততটুকুতেই খুশি। দিনের শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যেটা চাইবে, সেটাই গণতন্ত্র।
ছয়, জুলাই সনদ গণভোটে হেরে গেলে, পরের সরকার যারা গঠন করবে, তারা বলতে পারে, কোনো সংস্কারই আমরা করব না। তবে এটা বলার মানে হলো, এই কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় তারা যেটুকু একমত হয়েছিল, সেটা ইচ্ছা করে একমত হয়নি। বরং চাপের কারণে হয়েছে। তখন যেহেতু চাপও থাকবে না, সংস্কারও থাকবে না। এটা অবশ্য পারফেক্ট সেন্স মেইক করে। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলোর মনের মধ্যে যতটুকু ক্ষমতা আছে, ততটুকু সংস্কার যে নাই, এটা নিয়ে আমাদের কোনো সংশয়তো নেই। এই সংশয় নেই বলেই তো জুলাই সনদ আর গণভোট চাই।
সাত, যদি গণভোট ছাড়া জুলাই সনদ চাইতাম আমরা, তাহলে সেটা গণতন্ত্রের বাইরে একটা ‘সুশীল’ টাইপের জিনিস হতো। কিন্তু গণভোটের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ চাওয়া - এর চাইতে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা আর কী হতে পারে?