১১ নভেম্বর ২০২৫, ২১:২২

বিএনপির প্রার্থী তালিকায় আসতে পারে পরিবর্তন

বিএনপি  © লোগো

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে অনেকটা বিপাকে পড়েছে বিএনপি। বেশকিছু আসনে বিতর্কিত, অযোগ্য, বয়সের ভারে ন্যুজ ও হাইব্রিড নেতাকে নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা চরম হতাশা প্রকাশ করছেন। ক্ষোভে ও প্রার্থী প্রত্যাখ্যান করে নিয়মিত করছেন প্রতিবাদ মিছিল-বিক্ষোভ। তালিকা প্রকাশের পরদিনেই চরম বিতর্ক উঠায় মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থিতা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে দলটি। অনেক আসনে প্রার্থিতা বদলের আন্দোলন এখনো চলছে। কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিরোধ থামাতে না পারলে অনেক আসন হাতছাড়া হতে পারে বলে শঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।

গেল ৩ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭টি আসনের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। পরদিন একটি আসনে মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আরও ৬৩টি আসনে পরবর্তীতে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে, যার বেশিরভাগই সমমনা বা মিত্র দলকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে।

তবে তালিকা ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। চট্টগ্রামে সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে তার পক্ষে মনোনয়ন দাবি করেন। হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সীগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ফেনী, নাটোর, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, শরীয়তপুরসহ বহু জেলায় ঘোষিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন।

অবশ্য তালিকা ঘোষণার দিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ তালিকা চূড়ান্ত নয়। দলের স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে, পার্লামেন্টারি বোর্ডের কাছে প্রতীয়মান হয়- তারা কোনো আসনে প্রার্থী বদল করবে, সেটি নিঃসন্দেহে নিয়ম মেনে পরিবর্তন আসবে। 

নেতাকর্মীরা বলছেন, এরই মধ্যে মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে কামাল জামান মোল্লার প্রার্থিতা স্থগিত করলেও অনেক আসনে বিতর্কিত আর অযোগ্যরা বহাল রয়েছেন। মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা প্রকাশ্যে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন না। তবে দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী বদলের আন্দোলন চলমান রেখেছেন তারা। দলের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, এটি সম্ভাব্য তালিকা। কোনো এলাকায় প্রয়োজন হলে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে।

তিনি আরও বলেন, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিটি আসনেই বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছে। সবকিছু বিশ্লেষণ করেই প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। যদি কোনো সংশোধনের প্রয়োজন হয় অবশ্যই তা করা হবে।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধা ও বিরোধ পরিস্থিতি সামাল দিতে যারা মনোনয়ন পেয়েছে মাঠপর্যায়ে তাদের অবস্থান নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে যাচাই করছে দলটি। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য না করলেও, যাচাই বাছাইয়ের পর ঘোষিত ‘প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা’য় বেশকিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নেতারা।

আরও পড়ুন: নৈতিক স্খলন থেকে আওয়ামী তোষণ-অভিযোগের শেষ নেই আবু তাহেরের বিরুদ্ধে

সূত্র জানিয়েছে, যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার মধ্যে যেসব প্রার্থীকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই সেগুলো বাদে বাকি আসনগুলোতে মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীর অবস্থান যাচাই করা হচ্ছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার আগে বিএনপির পক্ষ থেকে এলাকা ভিত্তিক একাধিক জরিপ করা হয়েছে বলা হলেও বেশকিছু আসনের প্রার্থীরা নানা কারণে আলোচনা-সমালোচনায় এসেছেন। নোয়াখালীর একটি আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার বিএনপি নেতারা। সেই আসনটিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হতে পারে-সেই আলোচনা আছে বিএনপির ভেতরে।

বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় জড়িয়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে অন্তত দুটি জেলায়। এছাড়া আরও অনেকগুলো জেলায় ঘোষিত মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি করে মিছিল সমাবেশ, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ কিংবা বিক্ষোভের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দল থেকে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সেই উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে খুব শিগগিরই দেশের সব আসনে দলের নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে তারা আশা করছেন। 

এদিকে, এখনও দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে যাচ্ছেন। আর বঞ্চিত নেতারাও আশায় রয়েছেন যে দলের হাইকমান্ড ভুল শুধরে ত্যাগী, নির্যাতিত, কর্মীবান্ধব নেতাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেবে। 

ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে একজন নিহত হবার পর স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। সোমবার মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে একজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এই আসনে বিএনপি নেতা এসএম জাহাঙ্গীর মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে কয়েকদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে নিহত মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। স্নিগ্ধ বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতি উপজেলা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা অপেক্ষাকৃত তরুণ বেনজির আহমেদ টিটো। টিটো বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান মতিন। তিনি ২০১৬ সালে উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে বিরোধীদলের রাজনীতি করতে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করে চলে যান।

পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখে চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে এলেঙ্গায় তার নিজের নামের কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিও পালন করে বিতর্কের জন্ম দেন। শেখ মুজিবের শতবর্ষের জন্মদিনে এলেঙ্গাতে দোয়া মাহফিল ও বই বিতরণ অনুষ্ঠান করেন। ৫ আগস্টে হাসিনার পতনের পর তিনি আবার বিএনপিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। কালিহাতীতে নির্বাচনী প্রচারণাও তিনি সারা পাচ্ছেন না।

স্থানীয় বিএনপির এক নেতা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, বিগত ১৫ বছর রাজনৈতিকভাবে মতিন সাহেব শুধু নিষ্ক্রিয়-ই ছিল না তিনি পদ থেকেও পদত্যাগ করেছিলেন। তাকে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে যাকে নতুন প্রজন্মের কেউ বিশেষ করে যাদের বয়স বর্তমানে ৩০ বছর নতুন ভোটার হয়েছেন, তারা তাকে চেনেই না। অথচ মনোনয়ন না পাওয়া সত্ত্বেও কালিহাতীতে প্রতিনিয়ত ঘরে ঘরে গণসংযোগ ও দলকে গুছিয়ে আগলে রেখেছেন বেনজির আহমেদ টিটো। আমরা চাই টিটোকে ধানের শীষ দেয়া হোক।

নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহপল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক তরুণ নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। বিএনপির বর্ষিয়ান নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মৃত্যুর পর থেকে তিনি হাইকমান্ডের নির্দেশে নির্বাচনী গণসংযোগসহ দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন না দিয়ে বিএনপি মনোনয়ন দিয়েছে মো. ফখরুল ইসলামকে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর পুরো পরিবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি নিজেও জামায়াত কর্মী। স্থানীয় নেতারা জানান, ধানের শীষের প্রাথী ফখরুল ইসলাম ১৯৭৭ সালে বসুর হাট সরকারী কলেজে ছাত্রশিবির থেকে ভিপি নির্বাচন ও ২০০৯ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ফেল করেন। এছাড়া, ২০২৫ সালে ঢাকাস্থ নোয়াখালী জেলা সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে ফেল করেছেন তিনি। ব্যক্তিজীবনের প্রথমদিকে তিনি জামায়াতের প্রতিষ্ঠান ইবনে সিনার কর্মচারী ছিলেন। পরে ব্যবসায়ী হন। বিগত সময়ে দেশে লুটেরা বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলমের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও আছে।  

তারা জানান, ধানের শীষের প্রার্থীর মেয়ে ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি মিলি ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি) এবি পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি এবি পার্টির যুগ্ম মহাসচিবও। 

মুন্সীগঞ্জে-২ একটি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ। কিন্তু মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক এমপি ৮৮ বছর বয়সী মিজানুর রহমান সিনহা। দল মনোনয়ন ঘোষণার পর দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি সূত্র জানায়, বয়স ও অসুস্থতার ভারে আক্রান্ত সিনহাকে সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস নিতে হয়। চিকিৎসার জন্য দুবাই যাচ্ছেন তিনি। তাকে অন্যের সহযোগিতায় গাড়িতে উঠতে-নামাতে হয়।

লৌহজং উপজেলা বিএনপির এক নেতা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) জেলে যাওয়ার পর তিনি (মিজানুর রহমান সিনহা) বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে দল ছাড়েন। হাসিনার এমপি-মন্ত্রী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলিকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত করে বরণ করে নেন। মেয়ে স্নিগ্ধাকে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনীত করতে দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও জোরালো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। সিনহার ছেলে তানভির সিনহার ভায়রা ভাই আহসানউল্লাহ মাস্টারের ছেলে প্রতিমন্ত্রী রাসেল আহসান।

তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) সিনহা সাহেব নির্বাচনী জনসংযোগ করেছেন বেতকা ইউনিয়নের আওয়ামী দলীয় চেয়ারম্যান রিগান সিকদারসহ আওয়ামী নেতাকর্মীদের নিয়ে। এছাড়া, লৌহজং থানার সিমুলিয়া ঘাটে চাঁদাবাজির ও ঘাট দখলের অভিযোগে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয় কাওছার তালুকদার। সে লোহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওসমান গণি তালুকদারের ভাতিজা। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ শিকদারের অনুসারীরা সিনহার সঙ্গে নির্বাচনী কাজ-কর্মে অংশ নিচ্ছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি এক সভায় সিনহা সাহেব বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এই আসনে যারা মনোনয়ন চেয়েছেন, তারা ও তাদের অনুসারীরা প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে তাদের বিএনপিতে কোনো স্থান নেই। 

এদিকে, নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আজও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে মনোনয়ন বঞ্চিত নেতার সমর্থকরা। পোরশা উপজেলার সরাইগাছী মোড়ে নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডা. ছালেক চৌধুরীর সমর্থকরা ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি পালন করেন। এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

বিএনপি নেতা নূরে আলম সুজা বলেন, এই আসনে বিগত দিনে সব আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন ছালেক চৌধুরী। তিনি ত্যাগী, পরীক্ষিত ও কারানির্যাতিত। তার নেতৃত্বেই বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। তাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ। তারা এই আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানান।

বিএনপি আরেক নেতা মনজুর রহমান বলেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির উপর হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন কাজী আলাউদ্দীন। তিনি অতীতে চারদলীয় জোট সরকারের শরিক বিজেপি থেকে এমপি ছিলেন। তবে এখানে গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত দেশের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল আলমের মনোনয়নের দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধ করছেন বিএনপি, এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও এলাকার সাধারণ মানুষ। ডা. শহিদুল বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের শক্তিশারী সংগঠন ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি। কালিগঞ্জ এবং আশাশুনি উভয় থানাতেই ধারাবাহিক বিক্ষোভ হচ্ছে। ডাক্তারকে মনোনয়ন না দিলে সাধারণ মানুষ এবং  বিএনপির ভোটারদের একটি বড় অংশের ভোট ধানের শীষের বিরুদ্ধে যেতে পারে। আশাশুনিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিক্ষোভ করে ডাক্তার শহিদুল আলমকে মনোনয়ন না দিলে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের এ ঘোষণাকে আমলে নিয়ে বিএনপির হাইকমান্ড নতুন চিন্তা-ভাবনা করছে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবদুল মান্নান। মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী নাজমুল হোসেন। তিনি ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তার বাবা প্রয়াত কাজী আনোয়ার হোসেন এই আসনে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার হোসেন মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে।

ফেনী-২ আসনে সাবেক এমপি জয়নাল আবদীনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।  তিনি বয়সের ভারে ন্যুজ। এছাড়া, সম্প্রতি নির্বাচনী গণসংযোগে গিয়ে সম্প্রতি তার দেয়া বক্তব্য, আমার মনোনয়নে ফেনী-২ আসনের ৯৯ভাগ খুশি। বাকী যারা খুশি না তারা চোর, বাটপার,সন্ত্রাসী। তার এ বক্তব্য নেতাকর্মীদের আরও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।  

নাটোর-১ আসনে ভাই বোনের বিরোধ অবসান প্রার্থী পরিবর্তন করার সম্ভাবনার কথা বলছেন জেলা পর্যায়ের নেতারা। বিএনপি এখানে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে দলের সাবেক নেতা ও মন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের মেয়ে অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলকে। কিন্তু একই আসনে পুতুলের ভাই ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন। রাজনকে মনোনয়ন না দেয়ার পর থেকেই প্রতিদিনই সেখানে চলছে বিক্ষোভ, অবরোধসহ নানা কর্মসূচি। এর বাইরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুও একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। ফলে এ আসনে মনোনয়নের পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর থেকেই পুতুলের প্রার্থিতা বাতিল করতে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা দফায় দফায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেন।

কুষ্টিয়া ও বরিশালের দুজন প্রার্থীও বয়স জনিত অসুস্থতায় ভুগছেন দাবি করা হচ্ছে দলের ভেতর থেকেই। আবার বিএনপির সমমনা দলের একজন নেতার জন্য ঢাকার একটি আসন দলটি রাখলেও নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে বলে তিনি এখন আর ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নন বলে জানা গেছে।

আবার ওই নেতার জেলার আসনে ইতোমধ্যেই বিএনপি দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তার আগে সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষও হয়েছে।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলা) বিএনপিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এসএমএস কিবরিয়াপুত্র অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বিএনপির মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। তালিকা ঘোষণার দিন এই আসনটিতে কোনো প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি বিএনপি। রেজা ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে এই আসনে ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করেছিলেন। রেজা কিবরিয়া বিভিন্ন সময়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ ও এর বিভক্ত দল আমজনতার দলের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় রয়েছে হবিগঞ্জ-৪ আসনে। বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন এসএম ফয়সাল। তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এই মনোনয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সেখানকার উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে আসতে পারে নতুন মুখ। 

এদিকে, রাজবাড়ী-২ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। জোটের জন্য খালি রাখা ৬৩টি আসনের একটি। আসনটিতে জোটভিত্তিক প্রার্থী এনডিএমের মহাসচিব মোমিনুল আমিনকে এই আসন দেয়া হয়েছে বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘কোনো জোট প্রার্থী নয়, ধানের শীষের প্রার্থী চাই’ ব্যানারে আন্দোলন করছেন।

তারা জানান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহম্মেদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ ছবি পাওয়া গেছে। তিনি একজন আওয়ামী লীগের দোরর। এ আসনে কোনো আওয়ামী লীগের দোসরকে দেখতে চাই না। 

মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার) আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একজন নারী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন। বিতর্কের কারণে প্রার্থী ঘোষণার পরদিনই মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী কামাল জামাল মোল্লাহর প্রার্থিতা স্থগিত করে বিএনপি। তারই ধারাবাহিকতায় এ আসনেও পরিবর্তন আসতে পারে বলে গুঞ্জন চলছে দলটিতে। 

চট্টগ্রাম-২ আসনে বিএনপি ঋণখেলাপি সরওয়ার আলমগীরকে বেছে নিয়েছে। শিক্ষাগত যোগ্যতায় অষ্টম শ্রেণি পাস এ নেতা রাজনৈতিক পালাবদলের পর দলে সক্রিয় হন। ২০১৮ সালে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার চৌধুরী। তিনি ফটিকছড়ি বিএনপির আহ্বায়ক। নেতাকর্মীরা বলছেন, সরওয়ার অঢেল টাকার মালিক। সেখানে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তার মতো নেতাকে প্রার্থী করা হয়েছে। এটা নিয়ে সবাই ক্ষুব্ধ। এছাড়া সরওয়ার মূলত হেফাজতে ইসলামের প্রার্থী। হেফাজতের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছে।  

চট্টগ্রাম-৪ আসনে ‘হেভিওয়েট’ নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরীর বদলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপাতি কাজী সালাহউদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সালাহউদ্দিন আসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা আন্দোলনের পাশাপাশি গণপদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন। এ আসনে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। 

গাজীপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু। বিগত দিনে এ এলাকায় তিনি সক্রিয় ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তারের ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে কাজ করছেন আক্তারুল আলম মাস্টার। জনপ্রিয় এ নেতার বিরুদ্ধে ৩০টির ওপর মামলা এবং তিনি চারবার কারাবরণ করেছেন। তার পরও মূল্যায়ন না হওয়ায় ভোটে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন মিলনকে। তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সংস্কারপন্থি নেতা ছিলেন। এলাকায় নেতাকর্মীর সঙ্গে ভালো যোগাযোগ না থাকলেও তদবিরে মনোনয়ন বাগিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীর। ২০১৮ সালে এ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। বিগত দিনে তিনি এলাকায় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, মিজানের মতো জনপ্রিয় নেতাকে বাদ দিয়ে মিলনের মতো নেতাকে বাছাই করার খেসারত দলকে দিতে হবে।

নেত্রকোনা-৩ আসন নিয়েও জটিলতা বাড়ছে। সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে রফিকুল ইসলাম হিলালীকে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তুলেছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। সেখানে সাবেক মেয়র ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল নীরব ভূমিকা পালন করলে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে বলে শঙ্কা নেতাকর্মীর। 

চাঁদপুর-২ আসনে মো. জালাল উদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অথচ আন্দোলনের সময়ে স্থানীয় নেতাকর্মী নিয়ে তিনি বনভোজন করায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা তাকে প্রবাসী নেতা হিসেবেই চেনেন। এ আসনে ডা. মাহবুবের রহমান শামীম আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকলেও এবার তিনি বঞ্চিত হয়েছেন।

চাঁদপুর-৪ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতা এম এ হান্নানের অনুসারীরা কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশীদকে প্রার্থী করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম এ হান্নানের কর্মী-সমর্থকরা এর বিরোধিতা করছেন। স্থানীয় বিএনপি নেতা দোলোয়ার হোসেন দুলু বলেন, এম এ হান্নান যখন কারাগারে গেছেন, মামলা-হামলায় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন তখন হারুন নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন।

গোপালগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ডা. এ কে এম বাবরকে। অথচ গত ১৭ বছরে এলাকায় তার কোনো অবদান ছিল না। এ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সরদার মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। এলাকার মানুষ তাকে সবসময় কাছে পেয়েছে। 

চট্টগ্রাম-১২ আসনে গেল বছর ৫ আগস্টের পর এস আলম গ্রুপের গাড়িকাণ্ডে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হককে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। নেতাকর্মীরা জানান, এস আলম পরিবারের তদবিরেই এনামুলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও তা আমলে নেননি দলের শীর্ষনেতারা। অথচ এ আসনে বিগত আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার সৈয়দ সাদাত আহমেদের মতো জনপ্রিয় নেতাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ গত বুধবার চট্টগ্রামের চন্দনাইশে দলের এক অনুষ্ঠানে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো হাসিনার লোকজন সক্রিয়। কেউ এস আলমের মাধ্যমে, কেউ অন্যভাবে। চট্টগ্রামের পটিয়ার এনামুলের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এখনো এস আলমের লোকজনকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। এটি আমার কথা নয়, জনগণের কথা। আমিও তাদের সঙ্গে একমত।

সিলেট-৪ আসনে বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তবে রাজনৈতিক পালাবদলের পর মিফতার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা থেকে বিরত থাকে বিএনপি। পরবর্তিতে এ আসনে সিলেটের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। 

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতনের বাইরে সাবেক এমপি ও মন্ত্রী আবদুল হাইয়ের ছোট ভাই এবং জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন চান। সদর উপজেলা যুবদলের নেতা সালাহউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মহিউদ্দিনের বাড়ি সদর উপজেলায় আর রতনের বাড়ি গজারিয়ায়। সদরে ভোট বেশি। আবার মহিউদ্দিনের পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে সেখানে তাদের জনসমর্থন সবচেয়ে বেশি। এ পরিবার ছাড়া আসনটিতে জিতে আসা সম্ভব নয়।

বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ক্ষমতাসীনদের সহযোগী ও দোসরদের অর্থের বিনিময়ে পুনর্বাসন, বিএনপির বিভিন্ন কমিটিতে স্থান দেয়া, কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করে অন্য রাজনৈতিক দলের উপর তার দায় চাপিয়ে দেয়ার প্রতিজ্ঞা এবং নিজের নৈতিক চরিত্রের অধঃপতনের একাধিক ভিডিও চিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ায় নেত্রকোণা সংসদীয় আসন নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা উপজেলা) বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রাথমিক সম্ভাব্য ঘোষিত প্রার্থী আবু তাহের তালুকদারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বাড়ছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিএনপির সম্ভাব্য এই প্রার্থী গেল বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন অসাধু উপায়ে বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক বনেছেন। এই সময়ের মধ্যে নেত্রকোণা ও রাজধানী উত্তরায় তিনি বাড়ির মালিক হয়েছেন। 

নেতাকর্মীদের দাবি, বিতর্কিত লোককে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী না করে বিতর্কহীন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্য লোককে পূর্বধলায় মনোনয়ন দেয়া হোক। তাহলে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবে। তা না হলে দল একটি নিশ্চিত বিজয়ী আসন প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেবে বলেও মতামত তাদের।  

অভিযোগের বিষয়ে পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের সম্ভাব্য মনোনীত প্রার্থী আবু তাহের তালুকদার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে কিছু দুষ্টু লোক এসব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রচার করছে। এসব অভিযোগ করে আমার বিজয়কে তারা থামাতে পারবে না। নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হব, এটা নিশ্চিত। প্রতিদ্বন্দ্বী দল জামায়াতের প্রার্থী সেখানে পাত্তাই পাবে না বলে তিনি দাবি করেন।

এই আসনে ধানের শীষের প্রাথমিক সম্ভাব্য ঘোষিত প্রার্থী আবু তাহের তালুকদার চূড়ান্ত পর্যায়ে বাদ পড়লে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এএসএম শহীদুল্লাহ ইমরান মনোনয়ন পেতে পারেন। তিনি বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।