বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছাত্রদল কর্মী মৃত্যুর ঘটনায় পাঁচজন বহিষ্কার
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ছাত্রদল কর্মী তানজিন আহমেদ আবিদের মৃত্যুর ঘটনায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ পাঁচজন নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। রবিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আবিদের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরই এ সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
বহিষ্কৃতরা হলেন—গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরন, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম খোকন, সদস্য মাসুদ পারভেজ কার্জন, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সুজিত কুমার দাস ও যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ।
রাত ৯টার দিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক জরুরি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের অভ্যন্তরে হাঙ্গামা, সহিংসতা, রক্তপাত ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে রবিবার বিকেল ৪টার দিকে ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম. ইকবাল হোসেন প্রথমবারের মতো মোটরসাইকেল ও গাড়ির বিশাল বহর নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করেন। একই সময়ে পৌর শহরের পাটবাজার এলাকায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মনোনয়নবঞ্চিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিল।
ইকবাল হোসেনের সমর্থকরা মিছিল নিয়ে সেখানে প্রবেশের চেষ্টা করলে হিরনের অনুসারীরা বাধা দেয়। এরপরই উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রদল কর্মী তানজিন আহমেদ আবিদ (৩০) অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আবিদ ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি নূরুজ্জামান সোহেলের অনুসারী ছিলেন। তার বাবা মরহুম দেওয়ান মো. আবুল হোসেন ছিলেন দক্ষিণ জেলা উলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন তালুকদার আকাশ জানান, ‘গৌরীপুর সরকারি কলেজের হোস্টেল মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে হঠাৎ দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তখন হিরনের লোকজনের ধাওয়ায় দৌড়াতে গিয়ে আবিদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের হাতে অস্ত্রও ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে নেওয়া যায়নি। পরে মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মাঈনউদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে রিসিভ করেছি। মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।’
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষে কোনো আঘাতজনিত কারণে নয়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই আবিদের মৃত্যু হয়েছে।’