দেশ অস্থিতিশীল হলে ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হবে
দেশ অস্থিতিশীল হলে ফ্যাসিবাদী অপশক্তির পুনর্বাসনের পথ সুগম হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ শাসন আমলে ফ্যাসিবাদের রোষানল থেকে বাঁচতে, ফ্যাসিবাদ বিরোধীদের কেউ কেউ যে উপায়ে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করেছিল, পতিত পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তিও বর্তমানে একইভাবে গুপ্ত কৌশল অবলম্বন করে, দেশকে গণতন্ত্রের উত্তোরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে কিনা, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানাই।
আজ শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোট’ আয়োজিত হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনের ভার্চ্যুয়ালী যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন বাবু সোমনাথ দে। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ। এ ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন, মঠ মন্দিরের স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ এবং হিন্দু ধর্মীয় বিভিন্ন গোত্র ও সম্প্রদায়ের সদস্যগণ।
তারেক রহমান বলেন, প্রিয় ভাই বোনেরা আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। প্রিয় ভাই বোনেরা আপনাদের আলোচনায় যতটুকু আমি বুঝতে পেরেছি আজকের এই প্রতিনিধি মধু জনগোষ্ঠী সহ হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী আরও বিভিন্ন গোত্র সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
তবে রাজনৈতিক আলোচনার বাইরেও আপনাদের বক্তব্যে মতুয়া সম্প্রদায় সহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মধ্যকার বিভিন্ন গোত্র গোষ্ঠী রকে বেশ অনেকগুলো তথ্য আমি জানতে পেরেছি যা আমি মনে করি আমি এবং আমার দলও উপকৃত হয়েছেন। আপনাদের সবাইকে এই প্রতিনিধি সম্মেলনে আবারো আমি স্বাগত এবং অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, আমরা যারা যেই ধর্মই বা জাতি বা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করি না কেন নাগরিক হিসাবে আমাদের সবার প্রথম এবং প্রধান পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। একজন বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে এই বাংলাদেশে আপনার যতটুকু অধিকার আমারও ঠিক ততটুকুই অধিকার। কারো বেশি কারো কম তা নয়। রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মান এবং নিরাপত্তার সঙ্গে চলতে হলে একজন নাগরিকের জন্য নির্দিষ্ট কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীর সমর্থক হওয়া কিন্তু জরুরি নয়। রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার। তবে নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের জন্য অবশ্যই দেশের সংবিধান এবং আইন মেনে চলা সবচাইতে জরুরি বিষয়।
তারেক রহমান বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদের সময়কালে দেশের সবচেয়ে জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়া সত্ত্বেও সারা দেশে শুধুমাত্র বিএনপিরই ৫০ লাখ বা তারও কিছু বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কমপক্ষে দেড় লাখ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেদিন সাতশোর বেশি নেতাকর্মীকে গুম-অপরহণ-খুন করা হয়েছিল। অকারণে রাতের বেলায় আদালতে বসিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সেদিন রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। কারণ ছিল দেশে আইনের শাসন ছিল না সেদিন। পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে মুসলমান কিংবা হিন্দু বৌদ্ধ কিংবা খ্রিস্টান ডান কিংবা বাম বিশ্বাসী কিংবা অবিশ্বাসী ভিন্ন দল মতের কেউই সেদিন নিরাপদ ছিল না। ২০১২ সালে রামু মন্দিরে হামলা কিংবা ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরে যে হামলা হয়েছিল সেই হামলাসহ দেশ কোথাও কোন একটি হামলারও সেদিন বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হয়নি বা বিচার হয়নি।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে দেশের ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন ছাড়া সংখ্যা লঘু কিংবা সংখ্যা গুরু আমাদের কারো কোন পরিচয় কোনো নাগরিকেরই নিরাপত্তার গ্যারান্টি হতে পারে না। একমাত্র ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসনই দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা দল মত ধর্ম বর্ণ রাজনৈতিক পরিচয় শেষে একমাত্র আইনের শাসন ন্যায়বিচারী দেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান প্রতিটি ধর্মের প্রতিটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এটি বিশাল সুযোগ অপেক্ষমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ফ্যাসিবাদী বিরোধী আন্দোলনে আমাদের রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গী কারো কারো ভূমিকা দেশে আপনার আমার আমাদের বহু মানুষের অধিকার এবং সুযোগকে বিনষ্ট করার হয়তো একটি পরিস্থিতি তৈরি করছে। ৫ আগস্টের পতিত পরাজিত পলাতক অপশক্তি কোন দলের আড়ালে গুপ্ত কৌশলে ভূমিকা রেখে যাতে দেশকে অস্থীতিশীল করে তোলার সুযোগ না পায়। গুপ্ত বাহিনীর সেই অপকৌশল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে একটি ফ্যাসিবাদে বিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় এবং বহাল রাখা। এ কারণেই বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের রাজপথের সঙ্গীদের সাথে সহযোগিতা এবং সমঝোতার দৃষ্টিভঙ্গি সমুন্নত রেখেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি বরাবরই একটি শান্তিকামী সহনশীল গণমুখী রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। ভিন্ন দল ভিন্ন মতের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা এটি বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। দেশের জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার স্বার্থেই বিএনপির রাজনীতি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে একটি জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। অবশ্যই কারো দলীয় স্বার্থ বাস্তবায়ন করা এই সরকারের কাজ নয় এবং এ কারণেই বিএনপি এই সরকারের প্রতি কোনরকম চাপ প্রয়োগ করার পরিবর্তে বরং ভিন্ন মতের জায়গাগুলোতে নোট অফ ডিসেন্ট এটাকেই বিএনপি ডিসেন্ট ওয়ে বলে মনে করে।
মতুয়া সম্প্রদায় তথা হিন্দু ধর্মাম্বল্মীদের উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা নিয়েছে বা দিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আপনারা আপনাদের স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই করে নেবেন এবং বাংলাদেশকে একটি সম্প্রীতি এবং সমৃদ্ধির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি ইতিমধ্যেই দেশের জনগণের সামনে একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। আপনাদের রায় তথা দেশের জনগণের রায় বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সরকার থেকে সহযোগিতা করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫০ লাখ পরিবারের নারী প্রধানের নামে ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা করছে।
ঠিক একইভাবে ঠিক একইভাবে প্রান্তিক ক্ষুদ্র মাঝারী কৃষক যারা আছেন সেই কৃষকদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে যাতে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েতে পারেন সেজন্য তাদেরকে ফার্মাস কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। আগামী দিনে নির্বাচনে বিএনপির প্রতি আপনাদের যে সমর্থন আপনারা ব্যক্ত করেছেন সেই সমর্থন কামনা করছি। সীমাবদ্ধতা এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামের সীমাবদ্ধতার মাঝে আমাদের যদি সুযোগ হয় এতটুকু আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই, আপনাদের দাবি পূরণ করা হবে।