'এনসিপির অনড় অবস্থানের কারণেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ কমিশনের'
এনসিপির আপোষহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে। আমরা মনে করি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এনসিপির অনড় অবস্থানের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি আমরা ঐকমত্য কমিশনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর করবে না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পূর্ণব্যক্ত করেছেন তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন, আমরা বরাবর বলেছি জুলাই সনদ স্রেফ রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা বুলি ও দলিল নয়; অবশ্যই এর আইনি ভিত্তি থাকতে হবে৷ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই এনসিপি স্বাক্ষরের বিবেচনা করবে— এই ছিল আমাদের বক্তব্য।
নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আপনারা জানেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এনসিপি তখন স্বাক্ষর থেকে বিরত ছিল। আমরা শুরু থেকেই বলেছি, আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো সনদে স্বাক্ষর সম্ভব নয়। তাই বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব—এটাই ছিল আমাদের প্রাথমিক অবস্থান।’
তিনি জানান, সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যমত কমিশন সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করার পর এনসিপি তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করেছে।
প্রতিবেদনে কমিশনের দুটি স্বতন্ত্র বাস্তবায়ন রূপরেখার কথা উল্লেখ করে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘একটি সংবিধান সম্পর্কিত ৪৮টি সংস্কারের জন্য এবং অন্যটি সংবিধান-বহির্ভূত সংস্কারের জন্য প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশের খসড়া আকারে দেওয়া হয়েছে।’
এনসিপির মতে, সরকারকে কমিশনের ‘প্রস্তাব এক’ বাস্তবায়নের রূপরেখা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কার্য সম্পাদন করতে না পারলে, সেই বিল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত বলে গণ্য হবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে সংবিধান সংস্কার আইন কার্যকর হবে।’
গণভোট প্রসঙ্গে এনসিপি বলেছে, সংস্কার বিল দ্রুত প্রণয়ন করে জনগণের সামনে প্রকাশ করা উচিত। একই সঙ্গে তারা চায়, গণভোটের জন্য যে আদেশ জারি হবে, তাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্বাক্ষর থাকতে হবে এবং সেই স্বাক্ষর জনগণের সামনে শহীদ মিনারে প্রদান করা হোক। নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘জনগণের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত জনগণের সামনেই দিতে হবে।’
এনসিপি জানায়, তারা গণভোটের সময়সূচি নিয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে বিতর্কে যাবে না। বরং ইসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন গণভোট সুষ্ঠু, নিরাপদ ও আইনসম্মতভাবে পরিচালনা করতে পারে, সেটিই তারা চায়। দলের মতে, গণভোট আগে হোক বা পরে, আইনগত ও প্রশাসনিক শর্ত মেনে অনুষ্ঠিত হলে তারা সমর্থন জানাবে।
এনসিপি আরও বলেছে, কমিশনের প্রস্তাবিত বিল সরাসরি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত নয়; বরং জনগণের সামনে খসড়া আকারে উপস্থাপন করা হোক। কারণ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে ‘ড্রাফটিং জটিলতা’ তৈরি হতে পারে।
নাসীরুদ্দীন আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠালে কিছু মহল এটিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।’ তাই তারা চান, এই বিল বা আদেশটি ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমেই জনগণের সামনে উপস্থাপিত হোক।
রিফর্মড সংবিধান প্রণয়ন প্রসঙ্গে এনসিপি বলেছে, নতুন সংবিধান কার্যকর হলে বিচার বিভাগের সব বিচারককে নতুন করে শপথ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সাংবিধানিক দুর্বলতা না থাকে। তারা উল্লেখ করে, ২০২৬ সালের মধ্যে রিফর্মড সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্য থাকলে সংসদ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা যেন সময়মতো আইনগত দায়িত্ব পালন করে।
তবে এনসিপি সতর্ক করে দিয়েছে- সংবিধান সংশোধন বা ‘অ্যামেন্ডমেন্ট’ নামের কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের ঐতিহাসিক বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হলে তা জাতির জন্য বিপজ্জনক হবে। নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘জনগণের অর্জন আদালতের প্রক্রিয়ায় নস্যাৎ করার সুযোগ কেউ যেন না পায়।’