২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:০১

নভেম্বরে তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে যুক্ত হলো যদি-কিন্তু

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান  © ফাইল ফটো

আবারও আলোচনায় এসেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি। গেল বছরের ৫ আগস্ট (যা ৩৬ জুলাই হিসেবে খ্যাত) ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ও দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রায় ১৪ মাস পাড় হয়ে গেলেও এখনও দেশে ফেরেননি তিনি। হাসিনার পতনের পর থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বার বার উঠে এসেছে দীর্ঘ নির্বাসন থেকে কবে দেশে ফিরবেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উত্তরসূরি তারেক রহমান।

দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর এ জিজ্ঞাসার জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, ‘শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারেক সাহেব নিশ্চয় দেশে ফিরবেন, অবশ্যই দেশে ফিরবেন।’ কবে ফিরবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই ফিরবেন।’

গেল কয়েক মাস ধরে বিএনপি মহাসচিব ও দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য খুব শিগগিরই তারেক রহমানের দেশে ফেরার কথা বলে আসলেও এই প্রথম আগামী নভেম্বর মাসেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার সম্ভাবনার কথা জানালেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) তারেক রহমানের আসার বিষয়ে তথ্য দিলেন। এদিন গুলশানে নিজ বাসভবনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, নভেম্বর মাসেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।

‘‘মেডিকেল চেক-আপের জন্য ম্যাডামকে (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) হয়ত খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে লন্ডন যেতে হতে পারে। কারণ তার বেশকিছু জটিল অস্ত্রপচার ও চিকিৎসা সেখানকার চিকিৎসকগণই করেছেন। সেই চিকিৎসার ফলোআপ প্রয়োজন। ম্যাডাম যদি লন্ডন যান সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাটা আরও কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ নভেম্বর মাসের কথা প্রকাশ করলেও ওই মাসের কয় তারিখে আসছেন তারেক, তা প্রকাশ করেননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেই দিন তারিখ জানানো হবে। 

তবে, একাধিক বিএনপির সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নভেম্বরে দেশে ফিরতে পারেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার দ্রুত দেশে ফেরাটা জরুরিও। সামনের ফেব্রুয়ারিতে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের খুব বেশি দেরিও নেই। তাই যত শিগগিরই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরেন বিএনপির জন্য ততই মঙ্গল। তবে, নভেম্বরে তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। আর এ অনিশ্চয়তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ববোধ।

এসব নেতারা জানান, মেডিকেল চেক-আপের জন্য ম্যাডামকে (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) হয়ত খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে লন্ডন যেতে হতে পারে। কারণ তার বেশকিছু জটিল অস্ত্রপচার ও চিকিৎসা সেখানকার চিকিৎসকগণই করেছেন। সেই চিকিৎসার ফলোআপ প্রয়োজন। ম্যাডাম যদি লন্ডন যান সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাটা আরও কিছুদিন পিছিয়ে যেতে পারে।

এদিকে, চিকিৎসকদের পরামর্শে প্রয়োজনীয় ফলোআপ চিকিৎসার জন্য শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আবারও চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে পারেন বলে বিএনপি নেতারা জানালেও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামের লন্ডনে যাওয়ার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। এখনও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রয়োজনে যেতে হতে পারে। কারণ শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পূর্ণ সুস্থতার জন্য তার নিয়মিত আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা নেওয়াই এখন প্রধান অগ্রাধিকার।

এর আগে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখানে প্রায় এক মাস হাসপাতালের চিকিৎসা শেষে অবস্থান করেছিলেন তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায়, সেখান থেকেই তার চিকিৎসার ফলোআপ চলছিল। এরপর ছেলেসহ পরিবারের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করে গত ৬ মে দেশে ফিরে আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দেশে ফেরার পর তারেক গুলশানে ৭৯ নম্বর মায়ের ভাড়া বাসা ফিরোজা ও ১৯৬ নম্বর বাসায়। বিচারপতি আবদুস সাত্তার সরকারের সময় দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত ১৯৬ নম্বর বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এত বছর বাড়িটির নামজারি ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার গেল ৪ জুন বাড়িটির নামজারির কাগজ খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেন। এরপর থেকে বাড়িটির প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ চলছে।

সূত্র জানায়, লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে তারেক রহমানের জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যুসহ সব প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। তারেক রহমান বর্তমানে ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেইন (আইএলআর) স্ট্যাটাসে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। আইএলআর স্ট্যাটাসে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস, কাজ ও পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়; ব্রিটিশ নাগরিকত্বও পেতে পারেন।  

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আলোচিত সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকারের সময় চিকিৎসার জন্য স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ও মেয়ে জায়মা রহমানকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে যান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই থেকে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। লন্ডনে থেকেই তিনি বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের শক্তির প্রতীক তারেক রহমানকে শেষ করতে দেশি-বিদেশি নানা পক্ষ চক্রান্ত করেছে। তার বিরুদ্ধে নানা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। সেই তিনি দেশে ফিরছেন বাংলাদেশের নেতা হিসেবে। তাকে বরণ করতে দেশের মানুষ দিন গুনছে। অর্ধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।   

দেশে ফেরার পর তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখছেন।