১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২০:২৭

পুলিশের লাঠিপেটায় খুলে গেল জুলাইযোদ্ধা আতিকুলের কৃত্রিম হাত

জুলাইযোদ্ধা আরজে আতিকুল গাজী  © সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে সেখানে জুলাইযোদ্ধাদের ঢুকে পড়া ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) রাতেই জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।

জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি ও নিজেদের দায়মুক্তিসহ তিন দফা দাবিতে নিরাপত্তা বেষ্টনী টপকে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চে অবস্থান নেন জুলাইযোদ্ধারা। সেখানে গিয়ে তারা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। পরবর্তী সময়ে জুমার পর তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন তারা। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাত হারানো যুবক আরজে আতিকুল গাজী। তিনিও পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন। পরবর্তীতে এ ঘটনার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে তার কৃত্রিম হাত খুলে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করেছেন।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সেদিন বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার কাছে আতিকুলের হাতে গুলি লাগে। সেদিন তাকে নিয়ে প্রথমে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন এবং পরে স্বজনেরা পাঁচটি হাসপাতাল ঘোরেন। একটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তার হাতের গুলিটি বের করেন। পরিদন ৬ আগস্ট দুপুরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) তাকে ভর্তি করা হয়। আর ৭ আগস্ট অস্ত্রোপচার করে হাতটি কেটে ফেলতে হয়।এরপর থেকে আতিকুল কৃত্রিম হাত লাগিয়েই এতদিন ধরে চলাফেরা করছিল।

আজকের এ ঘটনার ছবিটি শেয়ার করে ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক পার্টির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা লিখেন, আজকের এই ছবি দেখে আতিকুলের লেখা কিছু কথা মনে পড়লো। এতে তিনি আতিকুলের আগের একটি লেখা (ফেসবুকে পোস্ট) শেয়ার করেন। লেখাটিতে উল্লেখ ছিল, ‘আপনারা যদি সংস্কার ছাড়াই ক্ষমতা চান, তবে আমার ১৬০০ শহিদ ভাইয়ের জীবন ফিরিয়ে দিন। আমার ২২ হাজার আহত ভাইয়ের আগের সুস্থ জীবন ফিরিয়ে দিন, আমার হাত ফিরিয়ে দিন।’ তার এই পোস্টটি সেই সময় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেছিলেন।  

এ ঘটনার ছবিটি শেয়ার করে অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য লেখেন, আমরা সবাই এই ১৯ বছর বয়সী জুলাই যোদ্ধা আতিকুল ইসলামের মুখে হাসি দেখেছিলাম। আতিকুল বলেছিলেন, ‘এক হাত কেটে ফেলতে হয়েছে তো কি হয়েছে, আরেকটা হাত আছে। জীবনটাও আছে। অনেকে তো জীবনটাই হারিয়ে ফেলছেন। আর দেশের প্রয়োজনের সময় কিছু একটা করতে পারলাম, এটাই তো অনেক।’ সেই আতিকুলের উপরে আজকে হামলা করে তার সেই কৃত্রিম হাতটাতেও পুলিশ পিটিয়ে বিচ্ছিন্ন করেছে। যাদের ত্যাগ আর রক্তের উপরে দাঁড়িয়ে আজকে এই সরকার তাদের সাথেই এই আচরণ সরকারের। ধিক এই সরকারকে। ধিক প্রফেসর ইউনূস।