ঘূর্ণিঝড় ফণী: ছাত্রলীগকে জড়িয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিটি ভুয়া
একাত্তর টিভির স্ক্রিনের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যাতে দাবি করা হচ্ছে, টেলিভিশন স্টেশনটি তাদের কোনো এক প্রতিবেদনে ‘ছাত্রলীগ প্রস্তুত থাকায় ঝড়ের গতি কমেছে’ তথ্য বা বক্তব্য প্রচার করেছে। কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এমন দাবি সম্বলিত ছবিটি ভুয়া, এডিট করা।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথমত-একাত্তর টিভির ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে ‘ছাত্রলীগ প্রস্তুত থাকায় ঝড়ের গতি কমেছে’-এই প্রসঙ্গে কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। সাধারণত, টিভি চ্যানেলটি তাদের প্রায় সব বুলেটিন ও রিপোর্ট এ দুটি জায়গায় আপলোড করে বা লাইভ সম্প্রচার করে।
এছাড়া অন্য একাধিক পত্রিকায় দুর্যোগ নিয়ে ছাত্রলীগের প্রস্তুতির খবর সংক্রান্ত প্রতিবেদন পড়ে আমরা আলোচ্য বক্তব্যের কাছাকাছি কোনো বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয়ত, ভাইরাল হওয়া ছবিতে যে স্ক্রিন দেখা যাচ্ছে সেটির সাথে একাত্তর টিভি ইউটিউব থেকে নেয়া একাধিক রিপোর্টের স্ক্রিন মিলিয়ে দেখা হয়েছে, বেশ কয়েক ক্ষেত্রে আলোচ্য ছবিটিকে এডিট করে বদলে ফেলা হয়েছে।
খেয়াল করুন, ভাইরাল হওয়া ছবিটির নিচের অংশে টেক্সটের যে তিনটি লেয়ার আছে সেগুলোর সবক'টির বক্তব্য একই ইস্যু সংক্রান্ত। এটা অস্বাভাবিক এবং অসম্ভব। সবচেয়ে নিচের লেয়ারটিকে বলে ‘লোয়ার টিকার’। একাত্তর টিভি এখানে সারাদিনের সংবাদগুলো এক লাইন করে ধারাবাহিকভাবে দিতে থাকে।
দ্বিতীয় যে লেয়ারটির শুরুতে ‘সর্বশেষ’ লেখা রয়েছে এটিকে বলে ‘আপার টিকার’। এখানে সর্বশেষ প্রাপ্ত কোনো খবর নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত প্রদর্শিত হয়। এরপর সেটিকে ‘লোয়ার টিকারে’ নামিয়ে দেয়া হয়, দিনের আগের অন্য খবরের সাথে। সারাদিন এমনভাবে চলে: প্রথমে খবরটি এসে ‘সর্বশেষ’ হিসাবে ‘আপার টিকারে’ প্রদর্শিত হবে। এবং এরপর ওই দিনের জন্য স্থায়ীভাবে ‘লোয়ার টিকারে’ প্রদর্শিত হবে (নিউজ এডিটররা প্রয়োজন মনে করলে অবশ্য এখান থেকেও অনেক সংবাদ বাদ দিয়ে দিতে পারেন)।
তৃতীয় এবং সবার উপরে যে বড় লেয়ারটি দেখা যাচ্ছে সেটি কোনো বুলেটিন চলাকালে কোনো প্রতিবেদনের মধ্যে প্রদর্শিত হয়- এটিকে বলা হয় ‘সুপার’।
লক্ষ্য করার বিষয় হলো, সাধারণত কোনো খবর যখন বুলেটিনে ঢুকে যায় তৎক্ষণে এটি আর ‘সর্বশেষ’ খবর হিসেবে থাকে না (তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে)। কারণ, একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে কিছু সময় লাগে, এবং ততক্ষণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ওই খবরটি ‘সর্বশেষ খবর’ এর স্থান হারায়, অন্য কোনো খবর এ জায়গায় চলে আসে।
তবে কোনো কোনো সময় ‘সুপার’ এর লেয়ারে যে খবরে টেক্সট দেখাচ্ছে সেটিই আবার ‘আপার টিকারে’ দেখানো হতে পারে।
কিন্তু একই প্রসঙ্গ তিনটি লেয়ারে একই সাথে দেখানো অসম্ভব। কারণ, কোনো খবর 'সর্বশেষ' অবস্থান হারানোর পরই শুধু সেটিকে ‘লোয়ার টিকারে’ নামানো হয়। ‘আপার টিকারে’ও চলছে, এবং একই সাথে 'লোয়ার টিকারে'ও চলছে একই খবর-এটা শুধু বড় ভুল হলে সম্ভব। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তা হতে পারে না। আর তিনটি লেয়ারে একই খবর বা বক্তব্য একইসাথে প্রদর্শিত হবে তা 'বড় ভুলেরও উর্ধ্বে' কিছু।
কিন্তু ভাইরাল হওয়া ছবিতে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা হয়েছে। আবার দেখুন, আপার টিকারের বক্তব্য-‘ছাত্রলীগ থাকায় ফনীতে (বানান ভুল) আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’- এটুকুর পর ইংরেজিতে লেখা হয়েছে ‘Ricardo’.
বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল তাদের স্ক্রিনে একই সাথে বাংলা ও রোমান হরফের সংমিশ্রণে কোনো বাক্য গঠন করে প্রচার করে না। অর্থাৎ এটি এডিট করে বসানো হয়েছে।
স্ক্রিনের যে জায়গায় ‘Ricardo’ লেখাটি রয়েছে প্রকৃতপক্ষে সেখানে একাত্তর টিভি সবসময় একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। এবং তার ঠিক নিচেই (লোয়ার টিকার অংশে) সংশ্লিষ্ট দিনের তারিখ, বার ও সময় (রোটেশন অনুযায়ী) প্রদর্শিত হয়।
এসব বিষয় থেকে এটা স্পষ্ট যে, ভাইরাল হওয়া ছবিটি ভুয়া ও এডিট করা। যদিও অস্যংখ মানুষের ফেসবুক পোস্ট দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি তারা বিষয়টিকে সত্য ভেবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।