ছয় বিভাগে এগিয়ে বিএনপি একটিতে জামায়াত
দেশের ভোটাররা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে সমর্থন করবেন এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ছয়টিতে বিএনপি এগিয়ে রয়েছে। জামায়াতে ইসলাম এগিয়ে আছে রংপুর বিভাগে এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে বরিশালে।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় আর্কাইভস মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জনগণের নির্বাচন-ভাবনা’ শীর্ষক জরিপের দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় পর্বের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। জরিপটি পরিচালনা করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন কনসাল্টিং। সহযোগিতা করেছে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম এবং বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (বিআরএআইএন)।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ইনোভেশন কনসাল্টিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। তিনি বলেন, “মূলত আগামী নির্বাচনে জনগণ কাকে ভোট দেবে, তা দেখার চেষ্টা করেছি।”
২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৪ জেলার ৫২১টি ওয়ার্ডে পরিচালিত এই জরিপে অংশ নেন ১০ হাজার ৪১৩ জন ভোটার। তাদের মধ্যে ৫ হাজার ৬৭৩ জন উত্তরদাতা ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে মত দিয়েছেন।
জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে বিএনপিকে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন যথাক্রমে ৪০.৮ শতাংশ, ৪৫.৭ শতাংশ, ৪৪.৭ শতাংশ, ৪৩.৩ শতাংশ, ৪১.৯ শতাংশ এবং ৪৪.৪ শতাংশ ভোটার। জামায়াতে ইসলামি পেয়েছে রংপুর বিভাগে ৪৩.৪ শতাংশ সমর্থন। অন্যদিকে, বরিশাল বিভাগে ৩১.৯ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে রয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত দল আওয়ামী লীগ।
সবমিলিয়ে, যারা সিদ্ধান্ত নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন, তাদের মধ্যে ৪১.৩০ শতাংশ বিএনপিকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। মার্চে এই হার ছিল ৪১.৭০ শতাংশ। জামায়াতের পক্ষে এই হার ৩১.৬০ শতাংশ থেকে কমে ৩০.৩০ শতাংশ হয়েছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন ১৮.৮ শতাংশ উত্তরদাতা, যা আগের ১৪ শতাংশ থেকে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে সমর্থনের হার ১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ০.৯০ শতাংশ। এনসিপি পেয়েছে ৪.১০ শতাংশ, যা আগের ৫.১০ শতাংশ ছিল। একমাত্র ইসলামী আন্দোলনের ক্ষেত্রে সমর্থন বেড়েছে—মার্চে ২.৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন ৩.১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
‘আগামী সরকার গঠনে সবচেয়ে যোগ্য দল’—এই প্রশ্নে ৩৯.১ শতাংশ উত্তরদাতা বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছেন। ২৮.১ শতাংশ জামায়াত, ১৭.৭ শতাংশ আওয়ামী লীগ, ৪.৯ শতাংশ এনসিপি এবং ১০.২ শতাংশ অন্যান্য দলের পক্ষে মত দিয়েছেন।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তাদের ভোট কোথায় যাবে—এই প্রশ্নে ৪৫.৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সেই ভোট বিএনপির ঝুলিতে যাবে। ৩৩.৫ শতাংশ বলেছেন জামায়াত, ৪.৭ শতাংশ এনসিপি, ৩.৮ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন এবং ২.১ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে ভোট যাবে।
আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করা এক হাজার ৮৪০ জনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ যোগ্য দল কারা? তাদের মধ্যে ৪৯.৫ শতাংশ বিএনপি, ১৭.৯ শতাংশ জামায়াত, ৩.৪ শতাংশ এনসিপি, ১.২ শতাংশ ইসলামী আন্দোলন, ৮.৭ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে দ্বিতীয় যোগ্য দল হিসেবে বিবেচনা করেছেন। ১৭.৪ শতাংশ বলেছেন, তারা কোনো দলকে দ্বিতীয় উপযুক্ত মনে করেন না।
ভোটারদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির প্রতি সমর্থন বেড়েছে, বিপরীতে জামায়াতের প্রতি সমর্থন কমেছে। তবে জেনারেশন-জি ও নারীদের মধ্যে জামায়াতের সমর্থন তুলনামূলকভাবে বেশি। আবার শিক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতের প্রতি সমর্থন বেড়েছে, যেখানে বিএনপির সমর্থন কমেছে।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ ভোটার ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। ৮ শতাংশ পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব চায়, ১৫.১০ শতাংশ ভারতের সঙ্গে।
ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা নিয়েও জরিপে প্রশ্ন রাখা হয়। মার্চে ৭১.২ শতাংশ উত্তরদাতা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের জরিপে ৫৭.৫ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির প্রত্যাশা জানিয়েছেন।