ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর এক বছর ধরে কারাগারে, নেপথ্যে কী?
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। এতে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪৫ জন প্রার্থী। নির্বাচনে ভিপি পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্রার্থী সাদিক কায়েম। ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আলোচনায় ফের উঠে এল সাবেক ডাকসু ভিপি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদের নাম। প্রায় এক বছর ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তার অপরাধ কী, কেন তিনি এখনও মুক্তি পাননি?
২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কানাডা থেকে দেশে ফেরেন সুলতান মনসুর। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই তাকে আটক করা হয়। পরে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। অথচ এর আগে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না।
১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জন্মগ্রহণ করেন সুলতান মনসুর। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, সিলেট এমসি কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সিলেট এমসি কলেজে পড়ার সময়ই তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। আশির দশকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে উঠে আসেন তিনি। ১৯৮৬ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং ১৯৮৯ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে প্রতিকূলতার মাঝেও ডাকসু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি উন্মোচন করা হয়।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে বিজয়ী হন তিনি। এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগেরসঙ্গে সুলতান মনসুরের দূরত্ব তৈরি হয়। ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীক চেয়েও পাননি। তারপর দলীয় পদ হারান। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তিনি আর যুক্ত নন। এর মাঝে ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের (গণফোরাম) প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচন তিনি বয়কট করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কানাডায় বসবাস করছিলেন।
সুলতান মনসুরকে ‘সংস্কারপন্থী’ রাজনীতিক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তার অবস্থান সবসময়ই আপোষহীন ছিল। এজন্যই তার হঠাৎ গ্রেপ্তার নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নঈম নিজাম এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ এখন কারাগারে। কেন তাকে আটক করা হলো? কেন এখনও মুক্তি মিলছে না? তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে অংশগ্রহণ যদি অপরাধ হয়, তবে বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরাও সমানভাবে দায়ী হবেন।”
তিনি আরও লিখেছেন, “সুলতান মনসুরকে ভয় পাওয়ার কারণ তিনি ১৯৭১, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসেন। ক্ষমতার রাজনীতি থেকে দূরে থেকেও তিনি আদর্শে অটল ছিলেন। টার্গেট আসলে ‘১৯৭১’, আর সুলতান মনসুররা সেই টার্গেটের অংশ।”
জানা গেছে, রাজধানীর পল্টনে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি তাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী মহাসমাবেশ ডাকে। এই মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা ও গুম করার উদ্দেশ্যে পুলিশের সহায়তায় বিএনপির ঢাকার মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। এতে অনেক বিএনপির নেতা-কর্মী আহত হন। যুবদল নেতা শামীম মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
ডাকসু নির্বাচন শেষ হলেও সাবেক ভিপি সুলতান মনসুরকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক অব্যাহত। তার মুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করছেন, একজন মুক্তিযুদ্ধপন্থী, সাবেক ছাত্রনেতা ও সংসদ সদস্যের এভাবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা দেশের গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডলের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।