০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:০৩

আগামী নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে আছি: জামায়াত সেক্রেটারি

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার  © টিডিসি ফোটো

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারিতে, এখনো ৫/৬ মাস বাকি। ছয়মাস আগেই আপনি বলে দিচ্ছেন এই এই তারিখে নির্বাচন হবে। অথচ জুলাই সনদে সব দল স্বাক্ষর করল না। জুলাই সনদে স্পষ্ট আছে, সব দল স্বাক্ষর করবে, সেই সনদের ঐক্যমতের বিষয়গুলো এখনো ঠিক হয়নি। তাতেই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট একটা সময় আপনি দিয়ে দিলেন।’ 

তিনি বলেন, ‘মাঝখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বললেন, সংবিধানে পিআর পদ্ধতি নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আপনি সংবিধান জানেন, সংবিধানে নির্বাচন পাঁচ বছর পর পর হবে, কিন্তু কোন পদ্ধতিতে হবে সেটির উল্লেখ নেই। পিআরে হবেনা সেটিও তো সংবিধানে নেই। সংবিধানে এটিও তো নেই, যে নির্বাচন হতে হবে ২০২৬ সালে। হাসিনার সংবিধানই যদি আপনি মানেন, তাহলে হাসিনা নির্বাচন করেছে ২০২৪ সালে, সে হিসেবে তো নির্বাচন ২০২৯ সালে হবে।’

জামায়াত সেক্রেটারি বলেন, ‘সেজন্য আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা এখনো সংশয়ের মধ্যে আছি। সরকার গতকাল (বুধবার) আমাদের কাছে একটা খসড়া চেয়েছে যে, এটার আইনি পথ দেখান। গতকাল রাতেই আমরা মিটিং করে একটা ড্রাফট তৈরি করেছি। আমরা সবসময় সরকারকে সহযোগীতা করতে রাজি আছি, আমরা কোন সংকট চাই না।’ 

এগ্রিকালচারিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ’র আয়োজনে আজ বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৪টায় রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউটের থ্রিডি হলে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি’ শীর্ষক সেমিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 

তিনি আরও বলেন ‘যে দলগুলো বেশিরভাগ ভোটার, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে তাদের কথা না শুনে কাদের কথায় পিআর পদ্ধতি দিতে চাচ্ছেন না। সেজন্য আমরা বলেছি, গণভোট দেন, গণভোটে যদি জনগণ পিআর চায়, তাহলে সকল দলকে মানতে হবে। যদি জনগণ বলে পিআর লাগবে না, তাহলে আমরাও (জামায়াত) সেটাকে শ্রদ্ধা করি।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘পিআর হলে কালো টাকা হবেনা, পেশিশক্তি দেখানো যাবে না, সব দলের পার্লামেন্ট হবে, রিচ পার্লামেন্ট হবে। ছোট ছোট দলগুলোও পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে। এক পার্সেন্ট ভোট যে পাবে, সে দলও তিনটা আসন পাবে। এখন কেউ যদি মনে করে, এতগুলো দল পার্লামেন্টে আসলে... আমার একার কর্তৃত্ব সব... আমি একা খাব। একটি অংশগ্রহণমূলক সংসদ হোক, সকলের অংশীদারিত্বে জনগণের সরকার দেশ চালাক এটা যারা চায় না, তারাই পিআরের বিরোধিতা করে। সুতরাং, জ্ঞানীদের জন্য ইশরায় যথেষ্ট।’ 

নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাব অবশ্যই, কিন্তু তার আগে পিআর-এর দাবি পূরণ করে ইনশাল্লাহ আমরা নির্বাচনে যাব। এ দাবি আমাদের চলতেই থাকবে। আমাদের দাবি মানতে হবে, তারপরে আমরা নির্বাচনে যাব। সবাইকে বাদ দিয়ে যদি, একই নির্বাচন করতে চান, তাহলে দেশের মানুষ সেটা আর হতে দিবে না। একাই নির্বাচন করবেন, ওই চিন্তা করে আর ঘুম নষ্ট করার দরকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘বহুকষ্টের বিনিময়ে আমরা দেশ সংস্কারে সুযোগটা পেয়েছি। কোন দলীয় সরকার আসলে আর সংস্কারের সুযোগটা আমরা পাব না। ইতোমধ্যে একটি দলের স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেছেন, আপনার যত সংস্কার আইন-কানুন বদলান, আমরা ক্ষমতাই আসলে সব মুছে দিব। বিএনপি নেতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যাওয়ার আগেই যদি মুছে দেন, তাহলে ক্ষমতায় গেলে কি করবেন।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে করেন, মার্চে করেন, জুনে করেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তো আমাদের কোন সমস্য নেই। আমরা এটাও বলেছি, যদি আরও আগে করতে চান করেন কিন্তু আপনাকে সংস্কারগুলো করতে হবে। গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে এবং পিআর পদ্ধিতিতে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। দিনক্ষণ নিয়ে তো আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু মুশকিল হয়েছে যে, বাইরের কোন পরাশক্তি হতে পারে, কোন রাজনৈতিক দলের প্রচন্ড চাপের মুখে হোক, সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন কমিশন কোন কোন ইস্যুতে একটা দুর্বল অবস্থান প্রদর্শন করছেন। চাপের কাছে তারা যেন মাথা নত করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা লন্ডনে গিয়ে একটি দলের প্রধানের সাথে দেখা করলেন। এটাতে আমাদের আপত্তি নেই, দেখা তিনি করতেই পারেন। কিন্তু তিনি যৌথ প্রেসব্রিফিংয়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিয়ে আসলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন কোন নজির নেই সরকার প্রধান ও দলের প্রধান একসাথে স্টেটমেন্ট দেয়। দলের প্রধানের সঙ্গে আপনি আলোচনা করেছেন, সেটা ঠিক আছে। দেশে এসে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারতেন। এগুলো বিষয় একটু ক্রিটিক্যাল হয়ে যাচ্ছে। এগুলোই প্রমাণ করে যে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক বা বাইরের কোন চাপে রয়েছেন।’

এগ্রিকালচারিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের (এএফবি) মহাসচিব কৃষিবিদ শেখ মুহাম্মদ মাসউদের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এগ্রিকালচারিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের সভাপতি ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. এটিএম মাহবুব ই ইলাহী (তাওহীদ)। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহা. ইয়ামিন হোসেন।

সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসন নাসির, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এস ওমর শাহরিয়ার কবীর, সাবেক সচিব ড. মো. জাহিদুর রহমান, ঢাকা সিটি উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মুসা, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মো. আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হুসাইন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. ফিরোজ হাসান, এগ্রিকালচারিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ’র উপদেষ্টা কৃষিবিদ গোলাম রব্বানী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল  হামিদ, এগ্রিকালচারিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি কৃষিবিদ আশরাফউদ্দিন আহমেদ।