০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৫৫

‘মব সংস্কৃতিকে বৈধতা দিয়েছে সরকার’, অভিযোগ ঢাবি অধ্যাপকের

অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন  © ফাইল ফটো

বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক বছরের মূল্যায়নে প্রশংসার তুলনায় সমালোচনার দিকগুলোই বেশি সামনে এসেছে। সরকারের এক বছরের সফলতা-ব্যর্থতার আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে মব ভায়োলেন্সের মতো ইস্যু। আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার অবনতি ও বিশৃঙ্খলার জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরীন। 
 
তিনি বলেন, ‘সরকার বা সেনবাহিনী বলছে যে মব ভায়োলেন্স টলারেট করবে না। কিন্তু কার্যত আমরা দেখতে পাচ্ছি যে মবের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এবং আমরা দেখেছি যে সরকার বিভিন্ন সময় একে বৈধতা দিয়েছে বলে মনে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেমন অপারেশন ডেভিল, তার মাধ্যমে মব বৈধতা পেয়েছে। তারপরে তৌহিদি জনতা। তারপর আমরা দেখেছে প্রেসসচিব বলেছেন যে এটা একটা প্রেসার গ্রুপ। এই যে বিভিন্নভাবে মবকে বৈধতা দেওয়া, এইটাকে আমি মনে করি সরকারের জন্য একটা নেগেটিভ পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেছে। মব একটা আতঙ্কের জায়গা তৈরির ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে আমি মনে করি।’

এ বিষয়ে জোবাইদা নাসরীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, গত এক বছরে দলীয় সমর্থন-সহযোগিতা সবকিছু পাওয়ার পরেও বিভিন্ন বিষয়ে সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে এবং জনগণের মতো করে হ্যান্ডেল করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বলবো যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আমি মনে করি যে মানুষের ভয়ের যে সংস্কৃতি সেটা থেকে মানুষকে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এছাড়া শেখ হাসিনার শাসনের যে কর্তৃত্ববাদী শাসনের ছায়া সেটা থেকে বের করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উন্নতির জন্য সরকার সেনাবাহিনীকে মেজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে মাঠে রেখেছে। সরকারের দাবি, পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকারের চেষ্টার ঘাটতি নেই। যে কোনো একটা অভ্যুত্থানের পরে নানারকম পটপরিবর্তন হয়। সেক্ষেত্রে নানারকম চ্যালেঞ্জ থাকে। এক বছর কিন্তু সেই পট পরিবর্তন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট সময় বলে মনে করেন জোবাইদা নাসরীন।

তার কথায়, ‘অনেকে বলছেন যে এক বছরে অনেককিছু বোঝা যাবে না, কিন্তু কিছু জায়গায় কিন্তু স্পষ্টই বোঝা যাবে। সেটা হলো সরকার কোন মতাদর্শকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গ্রহণ করছে।’ জোবাইদা নাসরীন বলছেন, সরকার জনগণের মতামতকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, সরকার তার ইতিহাসের দিকে কতটা তাকাচ্ছে, সরকার মানুষের সমালোচনাকে কতটা আমলে নিচ্ছে এটা গুরুত্বপূর্ণ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতেও একটা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘অনেকের কাছে গুরুত্বহীন, কিন্তু আমি বলবো এই সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা হলো বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধ, সেটাকে এ সরকারের বিভিন্ন ফোরাম থেকে আঘাত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকে নাই করে দেওয়া, তার বিরুদ্ধে অবস্থান এবং মুক্তিযুদ্ধকে হেনস্থা করা, মুক্তিযুদ্ধকে চব্বিশের সঙ্গে তুলনা করার যে একটা মানসিকতা তৈরি হচ্ছে, সেটা আমি মনে করি যে ঐতিহাসিকভাবে একটা হুমকির জায়গা।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা