২৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০৪

গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে প্রার্থী চূড়ান্ত, নেতৃত্বে অবমূল্যায়নের অভিযোগ মাহফুজের

সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি ফটো

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিকে উপেক্ষা করে প্রার্থীতা ঘোষণা, বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো এবং মানহানির অভিযোগে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সংগঠনের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান খান। শুক্রবার (২৫ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গতকাল ২৪ জুলাই প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে দলের মধ্যে কৃত্রিমভাবে এক প্রকার সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। আপনারা জানেন ২০১৮ সাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন এ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে কাজ করেছি। আমি কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। তখন শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে আমাদের অবস্থান ছিল এবং টার ৮ মাসের মতো আন্দোলন সংগ্রাম করে আমরা সফল হই। 

মাহফুজুর রহমান বলেন, তার মধ্যে ঘটে যায় জীবনের বিভীষিকাময় ঘটনা। এর মধ্যে জেল-জুলুম নির্যাতনের বিষয় তো রয়েছেই। আমি এবং বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ২০১৮। সালে আওয়ামী লীগে ফ্যাসিবাদী তন্ত্রের কাছে ১ জুলাই ভাষানটেক থানায় নির্মমভাবে গ্রেপ্তার, রিমান্ড ও কারাগারে ছিলাম। তারপর ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনে কবি জসীমউদ্দিন হলে ভিপি নির্বাচন করি এবং ছাত্রলীগের কারচুপিতে ২য় অবস্থানে প্রাপ্ত ভোট দেখানো হয়।

তিনি আরও বলেন, গতকালের প্রার্থীতা ঘোষণা ছিল একটা হটকারী কর্মকাণ্ড, যেখানে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের তেমন কোন আলোচনা বা মতামত সহ আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের সাথে কোন রকম আলোচনা ছাড়াই প্রার্থীতা ঘোষণা করে। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেভাবে নমিনেশন বোর্ড গঠন করার কথা, তার তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছে মতো প্রার্থী ঘোষণা হয়। যেটা ঘোষিত অধিকাংশ তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই জানে। সুতরাং এ প্রার্থী ঘোষণার জন্য তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ঔদ্ধত্য আচরণ ও অবমূল্যায়নের জন্য দল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, আপনারা জানেন আজকে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে অধিকাংশই আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের সাথে ছিল। কিন্তু গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের ঔদ্ধত্য আচরণ ও অবমূল্যায়নের জন্য তারা দল ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে কারণ যেখানে ত্যাগের মূলয়য়ন ও গুণের কদর করা হয় না সেখানে ত্যাগী ও গুণি মানুষ জন্মায় না। গণমাধ্যম সুবাদের আপনারা দেখেছেন, আমার মতো ত্যাগী নেতা যে কিনা ১১টা মামলা, বারবার হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি অখনই আমার আসন নিয়ে ছলছাতুড়ি শুরু করল। তখন আমি প্রতিবাদ করাতে হয়ে গেলাম মানসিক রোগী বা অসুস্থ। 

‘যে সহযোদ্ধা কিছুক্ষণ আগেও সুস্থ ছিল, স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে এখনি পাগল, মাতাল বানাইয়া দিলেন তাহলে এদের কাছে আসলে নিরাপদ কারা? সারাদেশের নেতৃবৃন্দরা আজ শঙ্কিত আর আমার আসন না বলে যে প্রোপাগণ্ডা ছড়ানো হয়েছে সেটা জঘন্য। আমি বৈধভাবে গাজীপুর-২ আসনের ভোটার।’

অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে মাহফুজুর বলেন, এ দলে অসংখ্য ত্যাগী নেতৃবৃন্দ থাকা সত্ত্বেও যখন ধরে এনে কাউকে নমিনেশন দেয়া হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় আাগীদের বাদ দিয়ে ডোনেশন ভিত্তিক আসন ঘোষণা হলো কিনা। তখন আর বুঝতে বাকী থাকে না। আরেকটা মজার বিষয় হলো আমাকে গতকাল স্কাইসিটি হোটেলে বসে অব্যাহতি দিয়েছে দলের শীর্ষনেতা যেটার সাংগঠনিকভাবে কোন ভিত্তি নাই। সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক চাইলেই উচ্চতর পরিষদ নেতাকে অব্যাহতি দিতে পারে না। তার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে উচ্চতর পরিষদের বৈঠকে পাশ করিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এটাতো মামু ভাগিনার দলের মতো সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। আমি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হল-  ত্যাগীনেতা ব্যতীত মনগড়া ও সাময়িক সংগঠনে ডোনেশনের উপর ভিত্তি করে যাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করা হয়েছে।তাদের প্রার্থীতা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থগিত করে, নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বশীলদের সাথে আলোচনা করে আগীদের নামে মনোনয়ন প্রদান করতে হবে; আমাকে যারা মিথ্যা ও বিভ্রান্তকরভাবে পাগল ও অসুস্থ বলে আখ্যা দিয়েছে তাদের সে স্টেটম্যান্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে এবং গণঅধিকার পরিষদ আমার সন্তানতুল্য সংগঠন সুতরাং আমার সংগঠন থেকে অবৈধভাবে ও অসাংবিধানিকভাবে অন্যাহতি নামক নোংড়া খেলা মঞ্চস্থ করা হয়েছে। তার জন্য ক্ষমা চেয়ে আমার সম্মান ফিরিয়ে দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, গতরাতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মাহফুজুর রহমান খানকে সংগঠন থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সাথে কেন তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না মর্মে ৭ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও সংগঠনের সুনাম ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।