২১ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৩

এনসিপির সমাবেশে হামলা, গোপালগঞ্জে গুলি ও ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন: এইচআরএসএসের উদ্বেগ

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)  © লোগো

গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা, গোপালগঞ্জে এনসিপির উপর আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্যদের সাথে সংঘর্ষের সময় যৌথ বাহিনীর গুলিতে পাঁচজন নাগরিকের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের দাফনের ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

এই ঘটনাগুলো গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের উপর মারাত্মক আঘাত হিসেবে বিবেচিত বলে মনে করছে সংগঠনটি। রবিবার (২০ জুলাই) সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৬ জুলাই, ২০২৫ তারিখে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির পূর্বঘোষিত ‘জুলাই পদযাত্রা’কর্মসূচির সমাবেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দ্বারা হামলা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা ঘটে। এই সংঘর্ষের সময় যৌথ বাহিনীর গুলিতে দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৩৫), ইমন (২৪) ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং রমজান মুন্সী (২৮) পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এছাড়া, বহু মানুষ গুলিবিদ্ধসহ আহত হন। অধিকন্তু, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়েছে, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতাকে বাধাগ্রস্ত করেছে। একইভাবে, গতকাল কক্সবাজারের চকরিয়াসহ তিনটি উপজেলায় এনসিপির পথসভা ভণ্ডুল করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর সরাসরি আঘাত।

এতে আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা শুধুমাত্র মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘনই নয়, বরং আইনের শাসন, নাগরিক নিরাপত্তা এবং বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি গুরুতর হুমকি। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি এই ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সুরক্ষিত করতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এসব ঘটনায় হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি কিছু সুপারিস জানিয়েছে। সেগুলো হল:

১. গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে। তদন্তে হামলাকারীদের পরিচয়, যৌথ বাহিনীর গুলি চালানোর কারণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।

২. হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্যদের এবং দায়ী যৌথ বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এই প্রক্রিয়া অবশ্যই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হতে হবে.

৩. আহতদের জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা প্রদান করতে হবে।

৪. যৌথ বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণ, নীতিমালা এবং কার্যপ্রণালী পুনর্গঠন করতে হবে। ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

৫. ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফনের ঘটনার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৬. শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই ধরনের হামলা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এবং এটি বন্ধে সরকারের দায়িত্ব অপরিহার্য।